কক্সবাজারের টেকনাফে শিশু শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফিকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার টেকনাফ থানার ওসিকে রক্ষা করতে মানববন্ধনে নেমেছে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারীদের একটি সিন্ডিকেট। উদ্যোগ ভালো হলেও মানববন্ধনে দলীয় ব্যানারে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) রেজাউল করিমের ছবি ব্যবহার এবং চিহ্নিত ও আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারীদের সরব উপস্থিতি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ ব্যক্তিকে রক্ষা করতে এটাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত কর্মকান্ড বলে দাবী করছেন স্থানীয়রা।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার হ্নীলা স্টেশনে এই মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলী আহমদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত মাদক কারবারী ও তার দুই ভাই ছৈয়দ আহমদ ছৈদু ও রশিদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন। তারা উভয়েই আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারী বলে জানাগেছে। এর আগে রোববার পৌর শ্রমিক দলের ব্যানারে টেকনাফ প্রেস ক্লাবের সামনে একই ব্যানারে মানববন্ধন করেছে পৌর শ্রমিক দলের নেতা কর্মীরা। মানববন্ধনে তারা যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম মেম্বারের ছবি সহ সকল অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের দাবী লিখা সম্বলিত ব্যানার বহন করেন।
বক্তারা মানববন্ধনে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) রেজাউল করিম কে মাদক কারবারী ও অস্ত্রধারী অখ্যাদিয়ে তার বিরুদ্ধে একচেটিয়া বিষুদগার করেন। যদিও ওই মানববন্ধনে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের সাথে রমরমা মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন এমন ব্যক্তিদের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। আবার এদের মধ্যে বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকের চালান সহ আটক হয়ে কারাভোগ করেছেন এমন ব্যক্তিদেরকেও ছিলেন। স্থানীয়দের মতে এসব ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান সময়ে কয়েকজন থানার চিহ্নিত দালালও রয়েছেন বলেও অভিযো স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মী জানান, মাদকের সাথে জড়িত এমন ব্যক্তিরা আরেকজনকে মাদকের প্রলেপ লাগিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বড়গলায় কথা বল্লে এটি কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। দলীয় ব্যানারে উদ্যোগ ভালো হলেও এসব লোকের কারনে তা সমাজে প্রভাব পড়েনা। আগামীতে এসব বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। খোঁজনিয়ে জানাযায়, গত ২৬ নভেম্বর উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দরগা পাড়া এলাকা থেকে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফিকে ভোরে সড়কের উপর থেকে অস্ত্রসহ আটক করে বলে দাবী করে পুলিশ। মামলায় শিশুটির পিতাকেও আসামী করা হয়। ওইসময় শিশু রাফিকে জোর করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির নামে একটি ভিডিও ধারন করে কৌশলে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বশরীরে ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন টেকনাফ থানার ওসি গিয়াস উদ্দীন। কিন্তু ওই ঘটনায় দুই স্বাক্ষীর বক্তব্যে ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা নাটক বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করাযায়। এর পরে ওসির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে বেকাদায় পড়েন ওসি গিয়াস উদ্দীন।
এদিকে, এই ঘটনায় সাংবাদিকরা স্বোচ্চার হলে গত ৩০ নভেম্বর ওসি গিয়াস উদ্দীন কৌশলে মতবিনিময় সভার নামে সাংবাদিকদের থানায় ডেকে নিয়ে নাস্তার প্যাকেটের সাথে খামে ভরে টাকা ধরিয়ে দিয়ে আরো একটি বিতর্কের জন্ম দেন। ফলে স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি অংশ ওসির বিরুদ্ধে আরো ক্ষেপে যায়। সুশীল সমাজের মন্তব্য, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সেটার ভালো উদ্যোগ। তবে এতো অবৈধ অস্ত্রধারী ও মাদক কারবারীদের ভিড়ে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট একজনের নাম ও ছবি ব্যবহার করে প্রতিবাদ সমাবেশ সেটা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। তাছাড়া এতোদিন রেজাউল করিম মেম্বারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তার শিশু সন্তানকে অস্ত্রমামলার আসামী সাজানোর পর, পুলিশের কর্মকান্ড যখন প্রশ্নের সম্মুখিন, ঠিক তখনই ওসির পক্ষ নিয়ে রেজাউল করিম মেম্বারের বিরুদ্ধে অবস্থান সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান সিদ্দিকির মুটোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে সংযুক্ত করা যায়নি।
বার্তাবাজার/এসএইচ