নওগাঁর ধামইরহাট সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জাল দলিল তৈরির কারিগর বরখাস্তকৃত দলিল লেখক ইয়াছিন আলী আবারও দলিল লেখকের সনদ ফিরে পেতে বিভিন্ন ধরণের অপচেষ্টা শুরু করেছেন। ভুক্তভোগি পরিবার ও দলিল লেখকগণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে তার দলিল লেখার সনদ সাময়িক স্থগিত করা হয়।

এদিকে আবারও দলিল লেখার সনদ ফিরে পেতে ইয়াছিন আলী অপচেষ্টা শুর করেছেন। তিনি দলিল লেখক সনদ ফিরে পেলে এলাকায় আবার অসংখ্য জাল দলিল তৈরি হতে পারে বলে মতপোষন করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার ও এলাকাবাসী। এতে দলিল গ্রহিতাগণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছেন। নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার বরারব ভুক্তভোগি পরিবার ও দলিল লেখকগণের অভিযোগে জানা যায়,দলিল লেখক ইয়াছিন আলী (সনদ নং-৫৫) তার বাবা আব্দুর রহমান এর ১৯৩.৫ শতাংশ জমি ২১/০৪/১৯৭৫ সালে রাজশাহী সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দানপত্র নামে একটি জাল দলিল তৈরি করেন। যার দলিল নং-২১০৬৯। প্রকৃত পক্ষে ২১০৬৯ নং দলিলের গ্রহিতা মোসা. ফাতেমা খাতুন, স্বামী মো. আফতাব উদ্দিন মিয়া এবং দলিলদাতা হলেন মো. আফতাব উদ্দিন মিয়া, পিতা মৃত ওসমান আলী, উভয় সাং- কালাবীপাড়া, চারঘাট, রাজশাহী। ওই জাল দলিলটি ধামইরহাট সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে ইয়াছিন আলী নামজারি করার জন্য আবেদন করেন।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) নথি পর্যালোচনা করে উক্ত ২১০৬৯ নং দলিল জাল ও ভূয়া বলে প্রমাণিত হওয়ার ভূমি অফিসের সার্টিফিকেট সহকারি আব্দুর রউফ বাদী হয়ে ধামইরহাট থানায় ইয়াছিন আলী কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৫,তারিখ ০৯/০৫/২০২২। ওইদিন থানা পুলিশ ইয়াছিন আলীকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেন। ২৮/০৮/২০২৩ ইং তারিখে জেলা রেজিস্ট্রার নওগাঁ বরাবর উপজেলার শালুককুড়ি গ্রামের আলতাফ উদ্দিনের স্ত্রী সালমা আক্তার বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, ঘাসিপুর মৌজায় তার ৪৮ শতাংশ জমি ইয়াছিন আলী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা নামে ধামইরহাট সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় দেখিয়ে একটি জাল দলিল তৈরি করেন। যার দলিল নং-৪৭৯২,তারিখ-২৪/১২/১৯৭৭।

বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান। ভুক্তভোগি সালমা খাতুন ও এলাকাবাসী বলেন,ইয়াছিন আলী আবারও দলিল লেখার সনদ ফিরে তবে এলাকায় অসংখ্য জাল দলিল তৈরি সম্ভাবনা দেখা দিবে। এতে এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। ধামইরহাট দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো.আব্দুল গফুর বলেন,ইয়াছিন আলী গং সাবেক উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার ধামইরহাট এবং দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে সদর সাব রেজিস্ট্রার বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। পরবর্তীতে জেলা রেজিস্ট্রার মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে গত ২৪/০৯/২০২৩ ইং তারিখে ইয়াছিন আলীর দলিল লেখার সনদ সাময়িক স্থগিত করেন। যার স্মারক নং-১০.০৫.৬৪০০.০০১.২৭.২০২৩- ৫৫৫।

এসব বিষয়ে সাময়িক বহিস্কৃত দলিল লেখক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, দলিল লেখার সনদ সাময়িক স্থগিতের বিরুদ্ধে আমি আইজিআর বরাবর আবেদন করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা দায়ের করেছি। আমি যড়যন্ত্রের স্বীকার। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার সজল সাহা বলেন, সাময়িক স্থগিতকৃত দলিল লেখক ইয়াছিন আলী আইজিআর বরাবর তার সনদ নবায়নের জন্য একটি আবেদন করেছি। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর বিষয়টি সুরহা হবে। এব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম এর মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ