সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কৃষকরা জমি থেকে আমন ধান ওঠার আগেই বোরো চাষের জন্য আগাম প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে অনেকেই। কেউ করছেন জমি প্রস্তুত, কেউ আবার বোরো ধান চাষের বীজতলা পরিচর্যা করছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বোরো আবাদের প্রতি কৃষকের আগ্রহ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। লবনসহিষ্ণু জাত চাষ করে ভাল ফল পেয়ে আগ্রহ বেড়েছে এসব কৃষকের মাঝে। চলতি বোরো মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১৯০ হেক্টর। গত বছর উপজেলায় বোরো চাষ হয়েছিল ২২০০ হেক্টর জমিতে এবং ফলনও ভাল ছিল। লবনাক্ত এলাকা শ্যামনগর উপজেলা হলেও লবন সহিষ্ণু ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশী। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের জবেদ আলী জানান, তিনি প্রতিবছর ১ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। এবার দেড় একর জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন বলে সেই পরিমাণ বিজ সংগ্রহ করেছেন। তিনি আরো জানান, সরকার খাল গুলো যদি ইজারা না দিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহারের উপযোগী করতেন তাহলে বোরো চাষে কৃষকের সেচের কোন প্রভাব পড়তো না। পানির অভাবে বেশিরভাগ মানুষ বোরো ধান চাষ করতে পারে না। তাই তার মতে খাল গুলো ইজারা না দিয়ে কৃষকের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি করেন তারা।
জেলেখালী গ্রামের বোরো চাষি নিরঞ্জন মন্ডল বলেন, বোরো ধান চাষ তিনি বেশ কয়েক বছর যাবত করে আসছেন এবং ফলনও পাচ্ছেন ভাল। কিন্তু বোরো চাষের প্রধান অন্তরায় মিষ্টি পানির অভাব। যে সকল খাল এলাকায় রয়েছে সে গুলিতে লবন পানি ভরা থাকে, লিজ দেওয়া থাকে। আবার পলি পড়ে ভরাট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শ্যামনগরের বোরো চাষি শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় আমন ফসলের পর বোরো ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলার প্রতিটি ইউপির খাল গুলি পুনঃখনন করা, মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা ও বোরো চাষিদের মাঝে লিজ দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা জানান, শ্যামনগর উপজেলায় বোরো ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়ে চলেছে যেভাবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবার আশা করা যায় ৩৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হতে পারে। উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়ে গেছে। উপজেলায় কৃষকরা লবন সহিষ্ণু জাত বিনা-১০, ব্রি-৬৭ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে থাকেন বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার আরো বলেন, উপজেলায় ১২০টির অধিক খাল রয়েছে যে গুলি পুনঃখনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা হলে কৃষকরা শুকনা মৌসুমে বোরো ধান চাষ সহ অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারেন। এখানে মিষ্টি পানির সংকট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপজেলায় লবনাক্তার প্রকোপ থাকলেও লবন সহিষ্ণু ধান চাষ করে কৃষকরা সফল হচ্ছেন বলে তিনি জানান। বর্তমানে জমিতে ৩/৪ পিপিটি পরিমান লবন রয়েছে বলে জানা যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বোরো চাষিদের বেশি বেশি জৈব সার ব্যবহার করার কথা বলেছেন এবং অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সাথে লবনাক্ততার পরিমাপ মাপার জন্য অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে শ্যামনগর উপজেলা চিংড়ী চাষের প্রবন এলাকা হলেও চিংড়ীতে বেশী লাভবান না হওয়ায় কৃষকরা আমন, বোরো ধান চাষ সহ অন্যান্য ফসল আবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন অনেকে। মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, কাশিবাড়ি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, ভূরুলিয়া, নুরনগর, শ্যামনগর সহ অন্যান্য ইউনিয়নে বোরো আবাদের ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এলাকার সচেতন মহলের মতে জোনিং সিস্টেমে ধান ও চিংড়ী চাষ করা সময়ের দাবী বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বার্তাবাজার/এসএইচ