৩মাস ১৪দিন পর আবারও খোলা হলো কিশোরগঞ্জের ঐতাহাসিক পাগলা মসজিদের সিন্দুক। এবার মসজিদের নয়টি দানবাক্স ও ২টি ট্রাঙ্ক খুলে পাওয়া গেল রেকর্ড পরিমান টাকা। সারাদিন গণনা শেষে যার অঙ্ক দাঁড়ায় ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। যা পূর্বের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এ মসজিদের প্রতি সবধর্মের লোকজনের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা থাকায়, তারা এ মসজিদে উদার হাতে দান করে থাকে।
দানের টাকায় মসজিদের উন্নয়নসহ আর্তমানবতার সেবা করা হয়। দিন দিন এর খ্যাতির কারনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন।
সিন্দুক খুলতেই বস্তা বস্তা টাকা। মসজিদ জুড়ে টাকার ছড়াছড়ি। সকাল সারে সাতটায় জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের নেতৃত্বে খোলা হয় মসজিদের সিন্দুক। টাকাগুলো ভরতে প্রয়োজন হয় ২৯টি বস্তা। পরে এগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে গণনার কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে টাকা গননার কাজ। এর আগে আগস্ট মাসে খোলা হয়েছিল সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় ৭ কোটি ২২লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। তবে এর আগে এপ্রিলে ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। তখন পাওয়া যায় ৭কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। এবার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেল, সবমিলিয়ে পাওয়া গেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়-এ বিশ্বাস থেকেই লোকজন দুহাতে ভরে দান করে এ মসজিদে। শুধু মুসলিম নয়, সব সম্প্রদায়ের লোকজন পাগলা মসজিদে দান করে। তবে পাগলা মসজিদে আসা ও স্থানীয় জনগন বলছে যে পরিমান টাকা আসে দান থেকে আরো উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
সারাদিন মসজিদ কমিটির লোকজনসহ প্রায় ৪০০জন এই টাকাগুলো গননা করে। সাথে ছিল দুটি টাকা গননা করার মেশিন। টাকার বস্তাগুলো একে একে ঢেলে দেওয়া হয় তাদের সামনে। এভাবে বস্তার পর বস্তা ঢেলে টাকা গণনার কাজ এগিয়ে চলে। ৯০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে ভরে যায় মসজিদের সবকটি সিন্দুক। এ কারণে সাধারণত তিন মাস পর পর খোলা হয় এগুলো। বিপুল পরিমান টাকা গণনার কাজ করে বিভিন্ন মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থী, মসজিদ ও প্রশাসনের লোকজন। কোটি কোটি টাকা গুণনার অভিজ্ঞতা পেয়ে খুশি তারা। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে টাকা গননার কাজ চলে সারাদিন।
মসজিদের বিপুল অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা প্রশাসক। দানের টাকাপয়সা মসজিদের উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ ও আর্তমানবতার সেবায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ১১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করার পরিকল্পনাও চলছে বলে জানান মসজিদ কমিটি। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদের ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে এর খ্যাতি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বার্তাবাজার/এসএইচ