জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাসা খালি পড়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতদের আবাসনের ৩৭ শতাংশ বাসা কেউ ব্যবহার করছেন না। যাদের মধ্যে হল প্রাধ্যক্ষরাও রয়েছেন। এসব বাসা অব্যবহৃত থাকার কারণে অযত্নে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আর্থিকভাবেও লোকসান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ৬টি বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এই ভবনগুলোও অব্যবহৃত থাকার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদভেদে মূল বেতনের ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বাসাভাড়া বাবদ ভাতা দেওয়া হয়। আর কর্মচারীরা পদভেদে এই ভাতা ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত পান। যারা ক্যাম্পাসের বাসায় থাকেন তারা এই ভাতা পান না। যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তারা এই ভাতা পান। মূলত ওই টাকা দিয়ে তারা কম খরচে অথবা বাইরে বেশি সুযোগ-সবিধাসম্পন্ন বাসায় ভাড়া থাকেন। যার ফলে ক্যাম্পাসের বাসাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বলছে, ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য যেসব বাসা রয়েছে সেগুলো বেশ পুরাতন এবং সুযোগ-সুবিধাও কম। ওই একই খরচে বাইরে বেশি সুযোগ-সবিধাসম্পন্ন বাসা পাওয়া যায়। যার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে না থেকে বাইরে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ছয় ধরনের (টাইপ) ৪৭৮ টি বাসা রয়েছে। এরমধ্যে এ টাইপ, বি টাইপ, সি টাইপ, ডি টাইপ বাসাগুলো শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ই এবং এফ টাইপ বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। এসব বাসার মধ্যে ১৭৮ টি এখনো খালি পড়ে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ টাইপের বাসা রয়েছে মোট ২৪ টি। এর মধ্যে প্রাধ্যক্ষদের জন্য নির্ধারিত ছয়টি দ্বিতল (ডুপ্লেক্স) বাসার চারটিসহ এ টাইপের মোট ১১ টি বাসা ফাঁকা রয়েছে। আর বি টাইপের ৬২ টি বাসার মধ্যে ২৫ টি, সি টাইপের ৭৪ টি বাসার মধ্যে ২৩ টি এবং ডি টাইপের ১০৪ টির মধ্যে ৮ টি বাসা ফাঁকা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফাঁকা রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ই ও এফ টাইপের বাসা। ই টাইপের ১১৪ টি বাসার মধ্যে ৩৯ টি এবং এফ টাইপের ১০০ টি বাসার মধ্যে ৭২ টি বাসা ফাঁকা রয়েছে।
ক্যাম্পাসের বাসাগুলোর পরিস্থিতি যখন এমন পর্যায়ে সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আরও ১০ তলা ও ১১ তলা বিশিষ্ট আরও ছয়টি আবাসিক বাসভবন, কমপ্লেক্স ও আবাসিক টাওয়ার নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব নির্মাণাধীন ভবনের কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাম্পাসে বাসা থাকারও পরও সেগুলোতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা-কর্মচারীরা থাকেন না। ফলে নতুন যেসব ভবন নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোও ফাঁকা পড়ে থাকার শঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ সাভারের অরুণাপল্লীতে বাড়ি বানিয়ে থাকছেন। এর বাইরে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী আমবাগান, ইসলামনগর এলাকাসহ সাভারের বিভিন্ন এলাকায় বাসা/ফ্লাটে থাকেন তারা। অনেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে যাতায়াত করেন। তাদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস।
বাসা খালি থাকলেও সেখানে থাকছেন না হল প্রাধ্যক্ষরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ টি হলের মধ্যে ১২ টি হলের প্রাধ্যক্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “যারা ক্যাম্পাসে থাকেন তাদেরকে হলের প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া উচিত। যারা নিয়োগ পান তাদেরও ক্যাম্পাসে থাকা উচিত। যদি ক্যাম্পাসে থাকে তাহলে সার্বক্ষণিক হলের দিকে খেয়াল রাখা যায়। বাইরে থাকলে মনটাও আসলে বাইরে থাকে। দিনের বেলা প্রাধ্যক্ষরা হলে যান ঠিক আছে, কিন্তু রাতে কোনো সমস্যা হলে যদি সে হলের প্রাধ্যক্ষ বাইরে থাকে তাহলে ক্যাম্পাসে আসতে বিলম্ব হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। ক্যাম্পাসের বাসাগুলো ফাঁকা থাকার কারণে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে ভবনগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বাসা ফাঁকা থাকার প্রধান কারণ বাসাভাড়া বাবদ যে ভাতা দেওয়া হয় সেই অনুযায়ী বাসাগুলোতে সুযোগ সুবিধা নেই। সেই তুলনায় ওই একই খরচ দিয়ে বাইরে ভালো মেইনটেইন্সের বাসা পাওয়ার ফলে সেখানে তারা থাকেন। এটা শুধু জাহাঙ্গীরনগরের সমস্যা না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কম টাকায় বাসা পাওয়া যায় সেগুলোতেও এই সমস্যা। বাড়িভাড়া নীতিমালা সংস্কার করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর যে ঘাটতি বাজেট থাকে বাসাগুলোতে সবাই থাকলে ওই ভাড়া দিয়েই অনেকাংশে ঘাটতি বাজেট পূরণ করা সম্ভব। এ বিষয়টিতে ইউজিসি এবং মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ নীতিমালা সংস্কার করা হলে বিষয়টি সমাধানের দিকে এগোবে।”
বার্তাবাজার/এসএইচ