চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত উগ্রবাদীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তার অনুসারীরা। পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এ সংঘর্ষের মধ্যে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় অবস্থিত মসজিদে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এরপর সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ইসকন সদস্যরা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ নভেম্বর (বুধবার) দুপুর আড়াই টার দিকে গবির ট্রান্সপোর্ট চত্বরে গবির ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান নূরের ইমামতিতে আইনজীবী আলিফের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও বাদামতলা হয়ে প্রধান ফটকে শেষ হয়। উক্ত বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা আইনজীবী আলিফ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গবির মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান মাহবুব বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের সদস্যরা দিন-দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে আমাদের ভাইকে হত্যা করেছে। যখন সবাই দেশ সংস্কারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তখন ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের সাথে আঁতাত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। সকল ছাত্র-জনতা ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবো। তারা উস্কানি দিচ্ছে কিন্তু আমরা আগুনে ঘি ঢালবো না।
তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকারের কাছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। ইসকনের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. আবু রায়হান বলেন, ইসকন এখন তাদের উদ্দেশ্য থেকে বাহিরে চলে গেছে। তারা এখন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এদেশের সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ সহাবস্থানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করায় বিশ্বাসী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে এবং ২৪’র বিপ্লবের পরেও মানুষ শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে। তারা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মিথ্যা ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে ও বর্তমানেও চালাচ্ছে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এই সংগঠনের সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ সকল ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির নিদর্শন তুলে ধরে ইসকনের ঘৃণিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে ও বিচারের দাবি জানায় এবং বাংলাদেশের মাটিতে ইসকনের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। ‘লিল্লাহি তাকবির, আল্লাহু আকবার,’ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা,’ ‘ইসকনের ঠাঁই নাই, আমার সোনার বাংলায়’, ‘জঙ্গি জঙ্গি, ইসকন তুই জঙ্গি,’ ‘ইসকনের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আমার মরলো কেন, জবাব চাই জবাব চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রকম্পিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন।
বার্তাবাজার/এসএইচ