ঘরে ঘরে মাদকের থাবা, ধ্বংস হচ্ছে কিশোর-তরুণ। অনেকে মাদক আমদানি করেন, কেউ পাচার করেন, কেউ স্পট চালায়, কেউ খুচরা বিক্রি করে, আবার কেউ লাইন ম্যান এর কাজ করেন। নারী পুরুষ নির্বিচারে মাদক সেবনও করেন। গ্রামের প্রতিটি মহল্লা কোনো না কোনোভাবে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত। কারো বাবা, কারো ভাই, কারো দাদা, কারো চাচা এই সমাজ ধ্বংসাত্বক।

মাদকের সাথে জড়িত। গ্রামের এমন কোনো মহল্লা নেই যারা মাদকের সাথে জড়িত নয়। এমন পাড়া খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যা সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে মাদকসেবী। অনেকে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশায় ঝুঁকি নিয়েও ঝুকছেন এই অবৈধ ব্যবসায়। সীমান্ত এলাকায় ঢুকলেই যত্রতত্র দেখা মিলে স্কোপ, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের খালি বোতলের। রাস্তার পাশে, স্কুলের মাঠে, ব্রীজ কালভার্টের নিচে, রেললাইনের পাশে, খোলা মাঠে সব জায়গায় দেখা মিলে এসব বোতলের।

মাদকের এই বয়াল থাবায় ধ্বংস হচ্ছে কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজ। এর থেকে বাদ পড়ছে না শিশুরাও। শিশুরা যা দেখে বড় হচ্ছে বড় হয়ে তাই করবে। এজন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে চিন্তায় আছেন সচেতন অবিভাবকরা। নিয়মিত পুলিশ টহল ও বিভিন্ন সময় টাস্কস্কোপ পরিচালনা করেও হচ্ছে না মাদক নিয়ন্ত্রণ। বিজিবি’র অভিযান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান, ডিবি’র অভিযান কোনোকিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না।

যেখানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক, এলাকাটি হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর। ভারতের সঙ্গে ৩৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে বিজয়নগর উপজেলার। দীর্ঘ সীমান্ত থাকার সুবাদে এখানকার বাসিন্দাদের একটি অংশ মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাশিনগর, নলগড়িয়া, নোয়াবাদী ও মিরাসানী। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া, ইকরতলী, কদমতলী, মহেশপুর ও ছতরপুর। পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামোড়া, কামালমোড়া, চান্দপুর, ঘিলামোড়া, কচুয়ামোড়া, ধোরানাল ও তোফায়েল নগর। হরষপুর ইউনিয়নের হরষপুর (খোনাইল্লা মোড়া), সোনামোড়া, দাড়িয়াপুর ও জালালপুর সহ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে দেখা যায় এসব চিত্র।

প্রতিদিন বিকালে জেলা সদর থেকে শতশত মোটরসাইকেলে মাদকাসক্তরা এসব গ্রামে আসে মাদক সেবন করতে। কেউ খেয়ে চলে যায় আবার কেউ সাথে করে নিয়েও যায়। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিজিবি’র কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এই উপজেলার অন্তত ছয় শতাধিক মাদক কারবারি এবং শতাধিক মাদক স্পট রয়েছে। মাদকের বড় একটি স্যান্ডিকেট রয়েছে। এজন্য এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায় সাধারণ মানুষ। এখানে মাদক ব্যাবসায়ীদের রাজত্ব চলে। মাদকের বয়াল থাবা থেকে দেশকে রক্ষার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন সুশীল সমাজ।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ