সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ও জগদাত্রী পূজা পালনে অসত্য তথ্য ও ভুয়া তালিকা প্রদানের মাধ্যমে আঠারো টি পূজা মন্ডপের সরকারি বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, সম্পাদক সহ ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের। এসব অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অলোক চক্রবর্তী। গত ১৪ নভেম্বর তিনি এ অভিযোগ দেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছেন অনেক মন্দিরের টাকা পাননি। আবার যারাও পেয়েছেন অনেকে পূজা করেননি।
অলোক চক্রবর্তী অভিযোগে উল্লেখ করেন, মঠবাড়িয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কর্মকার ,সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ সাওজাল এবং ভুয়া মোবাইল নাম্বার ব্যবহারকারী সঙ্গী হিসেবে আরো ৫-৭ জন মিলে পূজা মণ্ডপ দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন অনেক দিন ধরে। দুর্গাপূজা ও জগধাত্রী পূজা মিলে উপজেলার ১০৩ টি মণ্ডপের তালিকা দেয় মঠবাড়িয়া পূজা উদযাপন পরিষদ। এ তালিকা থেকে একাধিক মণ্ডপের কোন টাকা দেননি। তাছাড়া চাল সরকারি রেট অনুসারে ৬০ টাকা থাকলেও ৩৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন। স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে কম দামে চাল বিক্রি করতে হয়। তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগের একটি অনুলিপি পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির কাছেও পাঠানো হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
পূজা উদযাপন পরিষদ নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা পিআইও সহযোগিতায় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিসহ ৫-৭ জন মিলে এসব মণ্ডপের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বড় শিংগা সার্বজনীন শ্রী শ্রী গোবিন্দ ও দুর্গা মন্দিরের সহ-সভাপতি কেশব চন্দ্র রায় জানান, আমাদের এখানে দুর্গা ও জগধাত্রী পূজা হয়নি। আমাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে পূজা উদযাপন কমিটি সেটি আত্মসাৎ করেছেন। তবে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে মঠবাড়িয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কর্মকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ১০৩ টি মন্ডপে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় এর ভিতরে ৬২টি দুর্গাপূজা ও ৪১ টি জগধাত্রী পূজা। যারা দুর্গাপূজা ও জগধাত্রী পূজা করেছেন সবাইকে এক হাজার কেজি চালের মূল্য হিসেবে ৩৮ হাজার ১০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। যারা শুধু একটি পূজা করেছেন তাদেরকে ১৯ হাজার ৫০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। দুই একটি মণ্ডপের বাড়তি নাম দিয়ে আমাদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ সাওজাল বলেন, দেশের পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় থাকায় আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি সভাপতি ও জয়েন্ট সেক্রেটারি দায়িত্ব পালন করেছে। মঠবাড়িয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রনব রায় বলেন পূজা উদযাপন কমিটির সফলতায় একটি মহল ঈর্শান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে কিন্তু এই অভিযোগের কোন সত্যতা নেই
অভিযোগ সম্পর্কে সদ্য বিদায়ী মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন তালুকদার বলেন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জানবেন। দুর্গাপূজার সাথে একসঙ্গে ৬২টি পূজা মন্ডপ সরোজজমিনে পরিদর্শন করে দুর্গাপূজা ও ৪১টি জগধাত্রী পূজার বরাদ্দ দিয়েছি। তারপরও যদি কোন অনিয়মের বিষয় অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন। মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ূম অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূজা উদযাপন কমিটি থেকে আমরা তালিকা নিয়ে সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাই তার প্রেক্ষিতে বরাদ্দ হয়ে থাকে। অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বার্তাবাজার/এসএইচ