সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের পাশাপাশি খাদ্য সংকটে পড়েছে পরিবেশ বান্ধব প্রাণী কুকুর। এমন পরিস্থিতিতে দ্বীপের অনাহারী মানুষ খাদ্য সহায়তা না পেলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপের কুকুরদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে ‘সম্মিলিত প্রাণি রক্ষা পরিষদ’ নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে ট্রলার যোগে খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেন্টমার্টিন পৌছে। একই দিন বিকেলে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
সম্মিলিত প্রাণি রক্ষা পরিষদের দলনেতা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সেন্ট মার্টিনে খেতে না পেরে অনেক কুকুর মারা যাচ্ছে। এমন সংবাদে আমরা সেন্টমার্টিন পৌছে বিকেলে কিছু কুকুরকে শুকনো খাবার বিতরন করেছি। পর্যায়ক্রমে বাকী গুলোকে খাবার বিতরণ করা হবে। একই সাথে আমাদের সাথে ২০০ কুকুরের চিকিৎসা সরঞ্জামের পাশাপাশি দু’জন পশু চিকিৎসক ও একজন তাদের সহকারী রয়েছেন। তিনি বলেন, খাবারের মধ্যে রয়েছে ডগ ফুড ৩ হাজার কেজি, ৫ হাজার পিস ডিম, মুরগির মাংস, ডাল ও চাল। আমরা নিজেরাই রান্না করে খাওয়াবো এইগুলা। আমাদের মত সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলনে, সম্প্রতি সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত বিপাকে পড়েছে দ্বীপের কুকুরসহ নানা ধরনের প্রাণী। প্রায় তিন হাজার কুকুর রাতদিন বিচরণ করছে। ফলে দ্বীপের পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। প্রায় সময় দ্বীপে স্থানীয় বাসিন্দারা কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে খাবারের অভাবে অনেক কুকুর মারা গেছে। দ্বীপের বাসিন্দা আল জাবের হোসাইন বলেন, সৈকত পাড়ে দেখা গেছে ক্ষুধার তাড়নায় কুকুর মরা কুকুরের নাড়িভুড়ি খাচ্ছে। দ্বীপ বাসীর বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করে সরকারের সিদ্ধান্তের কারনে অধিকাংশ মানুষ একবেলা খেলে আরেকবেলা খেতে পাচ্ছেনা। এমন পরিস্থিতিতে ক’দিন পরে আনাহারী মানুষগুলো মানুষের গোস্ত খাবে।
দ্বীপের সাবেক ইউপি সদস্য নোমান বলেন, দ্বীপে ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসা নির্ভর। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে পর্যটন নির্ভর দ্বীপবাসী অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চরম দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে দ্বীপবাসী। তিনি আপেক্ষের সুরে বলেন- “দ্বীপের কুকুরের জন্যও খাবার আসে, কিন্তু অনাহারে থাকা মানুষের খাবারের দ্বায়বদ্ধতা কারো নেই।” দ্বীপের সাবেক ইউপি সদস্য হাবিব খান বলেন, আমাদের আন্দোলন কিছুটা হলেও সফল হয়েছে, অন্তত দ্বীপে কুকুরের খাবার এসেছে, তবে মানুষের জন্য আসেনি।
টেকনাফ উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ‘সম্মিলিত প্রাণি রক্ষা পরিষদ’ নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১১ সদস্যের একটি টিম কুকুরদের খাদ্য সহায়তা দিতে সেন্টমার্টিন পৌছেছে। প্রসঙ্গত, দ্বীপে কুকুরের উৎপাত কমাতে গত ২০২২ সালে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্টমার্টিন থেকে দুই হাজার কুকুর টেকনাফ লোকালয়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এর বিরোধিতার কারনে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছিলো।
বার্তাবাজার/এসএইচ