ভ্রমণপিপাসু আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের কাছে পাহাড় অন্যতম এক আকর্ষণের নাম। পাহাড় একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পাহাড় অথবা বর্ষায় ঘন সবুজে ছেয়ে যাওয়া পাহাড়, দুটোরই রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। তাই ভ্রমণপিপাসুরা সুযোগ পেলেই ছুটে যান পাহাড়ে। পাহাড় ঘুরতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তবে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হন। এই প্রিয় শখ থেকে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য শুরু থেকেই হতে হবে সতর্ক। নিরাপত্তা সংকটে যারা পাহাড়ে ভ্রমণে যেতে পারেন না। তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও পছন্দের পর্যটন স্পট হচ্ছে কক্সবাজার এর নিকটতম অরণ্য রাণী লামা। এটি বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা হতে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেখানে, পাহাড়, মেঘ আর আকাশের মিতালি। চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। চারদিক থেকে ধেয়ে আসে বিশুদ্ধ হাওয়া। এ যেন আশ্চর্যময় সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি, বাংলাদেশের ভূস্বর্গ বান্দরবানের লামায় নব উদ্যমে গড়ে উঠা, ‘মিরিঞ্জা পর্যটন স্পট’। যেখানে মিশে আছে পাহাড়, মেঘ আর আকাশ! নিরাপত্তা ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় একই সাথে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরার সুযোগ।
নিরাপত্তাঃ বাংলাদেশের কাশ্মীর খ্যাত তিন পার্বত্য জেলা। আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির কারণে প্রায়ই পাহাড় অশান্ত থাকে। তাই অনেক সময় পাহাড়ে পর্যটকদের আগমন বন্ধ রাখেন প্রশাসন। নিরাপত্তা ইস্যুতে গত ১ মাস যখন তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটক আসাযাওয়া নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখনও লামা উপজেলা ছিল উন্মুক্ত। বিশেষ করে লামা সীমান্তবর্তী কোন উপজেলা না হওয়ায় এখানের পরিবেশ থাকে সবসময় শান্ত। কখনো সাম্প্রদায়িক বা জাতিগত দাঙ্গা হয়নি। এ যেনো সকল ধর্ম ও বর্ণের মিল বন্ধতার চমৎকার উদাহরণ।
দর্শনীয় স্থানঃ এখানে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫০টির অধিক পর্যটন, রিসোর্ট ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, তংথমাং রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, অনন্য রিসোর্ট, মিরিঞ্জা ভ্যালী, মিরিঞ্জা প্যারাডাইস ট্যুরিজম, মারাইংছা হিল, ভিউ পয়েন্ট কিছুক্ষণ, মিরিঞ্জা সানরাইজ, হিল স্টেশন রিসোর্ট, মিরিঞ্জা ইকো রিসোর্ট, ন্যাচালার পার্ক, ভ্যালী ৯৭, হিল স্কেপ রিসোর্ট, মারাইংচা ওয়াইল্ড রিসোর্ট, সুখিয়া ভ্যালী, রিভার ভিউ, রিভার হিল, চুন্দার বক্স, দুইশত বছরের পুরানো সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধ বিহার, কোয়ান্টাম, নুনারঝিরি-আইম্যারা ঝিরি-নকশাঝিরিসহ অসংখ্য ঝর্ণা, লামা-ফাইতং রোডে ইকো রিসোর্ট ‘প্রংখংডং’, মাতামুহুরী নদী ও লামা খালে নৌকা ভ্রমণ, দুখিয়া-সুখিয়া সহ অসংখ্য পাহাড় ট্রেকিং, লামা খাল, পোপা খাল, বমু খালের মাছকুম, মাষ্টার পাড়া সুরুঙ্গ (গুহা), বীর বাহাদুর কানন, এনআইসি চেয়ারম্যান লেক আজিজনগর।
সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে কক্সবাজার মুখি আরকান সড়কের চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে বাস, চাঁদের গাড়ি ও রিজার্ভ সিএনজি সহ যে কোন যানবাহনে লামায় গমন। অথবা যারা বান্দরবান সদরে ভ্রমণে আসেন তারা অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে লামায় আসতে পারেন। তুলনামূলক কম খরচে ভ্রমণঃ লামা উপজেলা শহর হওয়ায় হোটেল ও আবাসিক স্থান গুলোতে থাকার খরচ তুলনামূলক কম। এখানে সদ্য পর্যটন শিল্পের বিকাশ হওয়ায় এখানকার হোটেল মোটেল ও বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মালিকদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা অধিক। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে তারা। অনেক জেলা বা উপজেলা হতে অর্ধেকেরও কম বাজেটে লামায় ঘুরে যেতে পারেন। সাবেক মহকুমা ও কয়েকদিনের জেলা হওয়ায় লামা উপজেলা সদর হতে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পর্যটন স্পটের কাছাকাছি গাড়ির যোগাযোগ রয়েছে।
রকমারি খাবারঃ ৪টি নৃ-গোষ্ঠী সহ বাঙ্গালীদের সুন্দর সহাবস্থানের কারণে লামায় সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিকমানের খাবারের বেশ কয়েকটি রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে এখানে। পাশাপাশি ট্রেডিশনাল খাবারের বাহারি আয়োজন তো আছেই। উল্লেখযোগ্য খাবারের স্থান গুলো হল, তংথমাং রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট, ফুড হিল, লাড়ং ফুড কর্ণার, হোটেল আমিরাবাদ ইত্যাদি।
বার্তাবাজার/এসএইচ