বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যত ধরনের সংস্কারের কথা আমরা আলাপ করছি, সেটা রাজনীতিবিদরাই পূরণ করবে। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি। সংস্কারের কথা বলছেন? দেশনেত্রী ছয় বছর আগে ভিশন টুয়েন্টি-থার্টিতে সংস্কারের কথা বলেননি? সংস্কারের জন্য আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা দায়বদ্ধ জাতির কাছে। ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি একা করেনি। ৪২টি দল, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, আমরা সবাই মিলে করেছি।

সোমবার (১১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিমের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ।

অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাছাড়া ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ও জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর উপর নির্মিত ডকুমেন্টরি শর্টফিল্ম প্রদর্শনী করা হয়। আমীর খসরু বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নির্বাচিত সরকারের দরকার। আওয়ামী লীগকে যদি বাতিল করতে হয় রাজনৈতিকভাবে, সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে বাতিল করা সবচেয়ে সহজ। সেই বাতিল হবে পার্মানেন্ট বাতিল। অন্য বাতিলে কাজ হবে না। অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় বাতিলে গেলে, সেই বাতিল কিন্তু সাময়িক কাজ করবে, দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে না। জনগণ যখন বাতিল করবে আওয়ামী লীগকে, সেটাই হচ্ছে আসল বাতিল। আমাদের ওদিকে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক খেলাধুলা চলছে বাংলাদেশে। অনেকে আমাকে বলেন, আবার কি শুরু হয়েছে দেশে? স্বৈরাচার চলে গেছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আমাদের কি আবার ইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে? আমি বলেছি, চিন্তার কোনো কারণ নেই। খেলাধুলা যারা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না। তারা বিএনপির শক্তি বুঝতে পারছে না। এই বিএনপি সেই বিএনপি নয়। এই বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে, এর শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। আমীর খসরু বলেন, ৭ নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের অনেকটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতার যে ভাবনা, যে চিন্তা, যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা স্বাধীনতার পরে সেদিন পূর্ণ হয়নি। বরং স্বাধীনতার পরে সেটাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসন, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, কালো আইন, এসবের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের লড়াই ছিল, সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধের যে স্যাক্রিফাইস, সেটা বাংলাদেশের মানুষ আবার নতুনভাবে পেয়েছে, নতুনভাবে গ্রহণ করেছে এবং উজ্জীবিত হয়েছে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনী সংস্কার। সব কথা শুনছি, নির্বাচনী সংস্কারের কথা শুনছি না। একটা কমিশন গঠন করেছে, আমরা খুশি হয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে, আমরা অপেক্ষা করছি। আমরাও কিন্তু নির্বাচনী সংস্কারের জন্য সবকিছু তৈরি করে রেখেছি। আমাদের সংস্কার তো আজকের না, বাংলাদেশ আগামী দিনে কি হবে, সেটা নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে কাজ করছি, প্রত্যেকটি। ক্ষমতায় যেদিন বিএনপি বসবে, সেদিন থেকে ইনশাল্লাহ সংস্কার কাজ শুরু হবে। বিচার বিভাগের সংস্কার, যেদিন থেকে বিএনপি বসবে ওইদিন থেকে শুরু হবে। একটা দিনও আমরা নষ্ট করব না। শিক্ষাখাত, ব্যবসায়ীদের বিষয়, সব খাতের সংস্কার, সবকিছু প্রস্তুত। ডে-ওয়ান থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আর কারা কি করবে আমরা জানি না, আমরা কি করব সেটা আমরা জানি। আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করলে, বাংলাদেশ নিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, দেশকে সেখানে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ