দীর্ঘ তিন মাস বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকার পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাপক থানজামা লুসাইকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বান্দরবান জেলার আওতাধীন উপজেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ১৪ জনকে সদস্য করা হলেও জেলার প্রায় অর্ধেক জনসংখা অধ্যুষিত জনবহুল লামা ও নাইক্কংছডি উপজেলা থেকে পাহাড়ি ও বাংগালী জনগোষ্ঠীর কোন সদস্য বা প্রতিনিধি না রাখায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এবিষয়ে সুজন চৌধুরী নামে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আর কত বৈষম্য করলে বান্দরবানের মানচিত্র থেকে লামার নাম মুছা যাবে। এটা ওদের পুরানো খেলা। লামা যখন জেলা হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল বান্দরবান সফরত তৎকালীন রাষ্ট্র পতিকে সুন্দরী রসগোল্লা খাইয়ে লামা বাসিকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।

অন্যজন বলেন, বান্দরবানের মানচিত্র থেকে লামার ছবি ‘নাই’ হয়ে গেল নাকি! সত্য বলতে মানা, না বলি। এটাই হলো ‘বৈষম্য বিরোধী সমাজ’। আমাদের বান্দরবানের চেতণায় বোধ হয় পচন ধরেছে, বুঝ মানুষ বুঝ! মানবতাবাদী ও সংবাদকর্মী রুহুল আমিন বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলার সবচেয়ে জনবহুল লামা উপজেলা থেকে পাহাড়ি ও বাংগালী কোন সদস্য না রাখায় বিবেকহীন, বৈষম্য মুলক ও নিন্দা জনক কাজ করেছে। সদরে চেয়ারম্যান সহ এত সদস্য কেন? ন্যায় বিচার না থাকলে কি ভাবে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্টা হবে? নবগঠিত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রতিহিংসা মূলক পাহাড়ি ও বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর কোন সদস্য বা প্রতিনিধি না রাখায় তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ১৯৯৭ এর ১৬ ক (৪) উপধারা এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৪ এর ৪(২) উপধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তীকালীন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক মানজামা লুসাই। এ পরিষদের সদস্যরা হলেন- বান্দরবান সদর উপজেলার রেইচা সাত কমল পাড়ার বাসিন্দা গোলাপ কুমার তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা, স-মিল চম্পাতলী গ্রামের বাসিন্দা চাইং থোয়াইং প্রু’র মেয়ে ম্যা ম্যা নু, থানছি উপজেলা শহরের হলা চিং থোয়াই মার্মার ছেলে এ্যাডভোকেট উবাথোয়াই মার্মা, বান্দরবান সদর রাজভিলা বাংকা পাড়ার বাসিন্দা মংবা মার্মার মেয়ে উম চিং মারমা, থানছি উপজেলার বয়ং হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা মৃত ডিংতে ম্রোর ছেলে খামলাই ম্রো, বান্দরবান সদর উপজেলার নিউ গুলশান পাড়ার বাসিন্দা মং এ চিং চাক, থানছি উপজেলার মরিয়ম পাড়ার বাসিন্দা মৃত বিশ চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে সানাই প্রু ত্রিপুরা, রুমা উপজেলার ৩৫৬নং পলি মেওজার অংশ পাড়ার বাসিন্দা দিরচেও বমের ছেলে লাল জারলম বম, রোয়াংছড়ি উপজেলার অং তং পাড়ার বাসিন্দা লিংসে খুমীর ছেলে নাংফ্রা খুমী, আলীকদম উপজেলার লিয়াকত আলী পাড়ার বাসিন্দা ছাবের আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলাম, বান্দরবান সদর উপজেলার ভিআইপি রোড়ের চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও আর্মি পাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদের ছেলে মুহাম্মদ আবুল কালাম, বান্দরবান সদর উপজেলার মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা লাপাই মার্মার মেয়ে এ্যাডভোকেট মাধবী মার্মা ও বান্দরবান সদর উপজেলার বাজার পাড়ার বাসিন্দা নুরুল হকের মেয়ে খুরশিদা ইসহাক।

একই সঙ্গে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরের ২৯.০০.০০০০.২১৪.০১. ২২৪.১৮-১৫৫ নম্বর স্মারকের প্রজ্ঞাপন দ্বারা গঠিত পরিষদ বাতিল করে পুণরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত উপর্যুক্তভাবে পুনগঠিত অন্তবর্তীকালীন পরিষদ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এবং এই আইনের সকল সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সকল দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞাপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ পরিষদ পুনর্গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ