সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের ছাল চামড়া উঠে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সড়কে চলতে গিয়ে যানবহনের চালক ও যাত্রীরা ধূলাবালিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। অতিমাত্রায় নষ্ট হওয়া সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হতে বসেছে। আর দ্রুত নতুন সড়ক নির্মান না করা হলে ৩ উপজেলার সাথে জেলার সংযোগ ব্যাহত হওয়ার আশংঙ্কা করছেন অনেকে।
এদিকে, সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে বলছে, সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ ফুট প্রস্থ সড়কের দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা জেলা শহর হলে দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার একমাত্র সড়ক এটি। এমনকি বিশ্বের অন্যতম সুন্দরবন ভ্রমণের একমাত্র সড়ক পথ এটি। কিন্ত বছরের পর বছর ধরে কার্পেটিং নষ্ট হয়ে পাথর উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে জনভোগান্তি বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে বর্তমান বর্ষা মৌসুমে সড়কটি ব্যবহারে অযোগ্য হতে বসেছে। সারাবছর ধরে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে মেরামত করা হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। কোন কোন স্থানে কার্পেটিং উপর ইটের রাস্তা তৈরি করেছে সওজ। সড়কের দুপাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান প্রেক্ষাপটের চাহিদার তুলনায় সড়কটি অত্যান্ত সংকীর্ণ। ফলে প্রতিনিয়ত এ সড়কে প্রানহানীর ঘটনা বেড়েই চলেছে।
এদিকে, গত ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারী দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সড়ক উন্নয়ন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তৎকালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রানালয় সচিব মো. সফিকুল আহম্মদ জানান, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কটিকে বর্তমান ১৮ ফিট প্রস্থের স্থলে ৩৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ফিট প্রস্থের আঞ্চলিক মহাসড়ক ক্যাটাগরিতে উন্নীত করণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। যা দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ন সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের ৬২ কিলোমিটার উন্নীতকরণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেক কর্তৃক অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য প্রেরণ এবং চুক্তির এক বছর পেরিয়ে গেলিও কাজ শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া আওয়ামী সরকারের পতনের পর পূর্বের চুক্তিকৃত কাজ বাতিল করে নতুন ভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে বেশ কিছু সময় লেগে যাবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সেই সাথে সড়কের ছোটখাটো সংস্কারের জন্য বরাদ্ধকৃত উপদান ফুরিয়ে যাওয়ায় এই মুহুর্তে কোন কাজ করতে পারছে না দপ্তরটি। তবে বর্তমানে সড়কজুড়ে গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত লোড আর নির্মাণ কাজ যথাযথ না হওয়াকে দায়ী করেছেন এ পথের যাত্রীরা।
পথচারী কালিগঞ্জ উপজেলার মেহেদি হাসান জানান, রাস্তা খারাপ হওয়ায় বিগত দিনে কালিগঞ্জ থেকে সাতক্ষীরা যেতে যেখানে সময় লাগত ১ ঘন্টার স্থানে বর্তমান ২ ঘন্টার মত সময় লেগে যাচ্ছে। তারপরেও সুস্থ ভাবে পৌঁছানো দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তায় এত পরিমান গর্তের সৃষ্টি হয়েছে তাতে চলাচল করা অসম্ভব। এমন অবস্থা হয়েছে সুস্থ মানুষ সাতক্ষীরা পর্যন্ত যেতে যেতে রুগি হয়ে যাচ্ছে। দেবহাটা উপজেলার বাসিন্দা সুব্রত কুমার জানান, কর্মের সুবাদে রোজ জেলা শহরে যেতে হয়। কিন্তু কোন জেলার প্রধান সড়ক এতপরিমান খারপ হয় সেটি ভেবে তিনি অবাক হয়েছেন। তিনি আরও বলেন এই সড়কটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই পথ দিয়ে বিগত দিনে সাতক্ষীরা-২,৩ ও ৪ আসনের ৩ জন এমপি চলাচল করলেও কি তাদের চোখে এই সমস্যা কোনদিন পড়েনি। যেখানে দক্ষিণাঞ্চল এলাকা থেকে চিংড়ি, কাঁকড়া রপ্তানি করে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ আসে। সেই রাস্তার অবস্থা যদি এমন হয় এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু থাকে না।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মুজাহিদ বিন ফিরোজ জানান, বিগত দিন যে সব কাজ হয়েছে তার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ছিল না। যার ফলে আমাদের প্রধান সড়কে বার বার কাজ করেও তা টেকসই করা যায়নি। বিশেষ করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কটি কয়েক দফায় নতুন ভাবে নির্মাণ করা হলেও তা কয়েক মাস যেতে না যেতে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আমরা এই সড়কটি উন্নত সড়কের আদলের নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা যত দুর জানি নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য সাতক্ষীরা শহর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেটি কিছু দুর আসার পর অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের কপালে আবারও দূচিন্তার ভাজ পড়েছে। কোন ভাবে যেন কাজটি থেমে না যায়। আমরা বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি সড়কটি দ্রুত নির্মাণ করে এই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি লাঘব হোক।
সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী পর্যন্ত মহাসড়ক যথাযথ মানের উন্নীতকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ টি প্যাকেজে ৬২.৩২৫ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৮২২৪৪.১২ লক্ষ টাকা ব্যায় ধরা হয়। যা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আদেশ মোতাবেক ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ৩০ জুন ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সরকার পতনের পর সব টেন্ডার বাতিল হয়ে নতুন ভাবে টেন্ডার হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে কবে নাগাত কাজ শুরু হবে এটি বলা যাচ্ছে না।
বার্তাবাজার/এসএইচ