মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের জন্য সংকুচিত হয়ে পড়া ফার্মগেট থেকে শাহবাগের সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের সড়কগুলোতেও। অসহনীয় যানজটে পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ভিআইপিদের চলাচলের সময়ে এই অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে পড়ে।
মেট্রোরেল নির্মাণ এলাকার যানজট উত্তরণে সড়ককে একমুখী করা, বিকল্প সড়ক ব্যবহার, ফুটপাত কমিয়ে সড়ক বাড়ানো, আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
সূত্র জানায়, ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যানজট নিরসনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রকল্প ব্যবস্থাপনা-২ এর দায়িত্বে থাকা মো.সারওয়ার বলেন, ‘মেট্রোরেলের নির্মাণের সময় প্রধান সড়কের দুই পাশে ১১ মিটার স্থান জুড়ে প্রকল্পের কাজ করতে হয়। এতে সড়কের প্রশস্ততা কমে যায়। স্বভাবতই সড়কে যানজট বেড়ে যায়।’
যানজট কমাতে ওই সভায় ব্যবস্থাপক মো.সারওয়ার দুটি প্রস্তাব দেন— ১. ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের দিকে যাওয়া বিমানবন্দর সড়ক, রোকেয়া সরণী ও খামারবাড়ি সড়ক থেকে আসা ছোট গাড়ি ও থ্রি-হুইলার তেজতুরি পাড়া এবং তেজতুরি বাজারের মধ্যবর্তী সড়ক তেজগাঁও স্টেশনরোড ব্যবহার করে সাত রাস্তা মোড় হয়ে যাতায়াত করবে। অন্যদিকে, মতিঝিলের দিক থেকে ফার্মগেটে আসা ছোট গাড়ি ও থ্রি হুইলার গাড়িগুলো বাংলামোটর থেকে সোনারগাঁও সড়ক ব্যবহার করে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সামনে দিয়ে গ্রিন রোড হয়ে ফার্মগেটে যাবে। এতে মূল সড়কে যানবাহনের চাপ কমে যাবে। ২. ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের দিকে কাজী নজরুল ইসলাম সরণী এবং কাকরাইল থেকে মগবাজার ফ্লাইওভার হয়ে মহাখালী পর্যন্ত প্রধান সড়ক একমুখী হিসেবে চালু করা। সে ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী এলাকায় যাতায়াতকারী গাড়িগুলোর জন্য সংযোগ সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে।
সভায় ডিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম জোনের ডিসি লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘মেট্রোরেলের জন্য সড়কে যে চাপ বাড়ে— তা মোকাবিলায় ফার্মগেট,কারওয়ান বাজার ও শাহবাগে ফুটওভার ব্রিজ এবং আন্ডারপাস ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি হলিক্রস থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের বাধা দূর করার কথা বলেন। এক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেলক্রসিংয়ের উভয়দিকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, এটিএন নিউজের (টিভি চ্যানেল) সামনের সড়কে পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, ফুটপাত থেকে ইলেকট্রিক পোস্ট অপসারণ, প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সুবিধার জন্য মেট্রোরেলের কাজে দখল করা জায়গার উভয়পাশের রাস্তা আট মিটার প্রশস্ত করার কথা বলেন। প্রয়োজনে ফুটপাত ভাঙার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ডিএমটিসিএল) ডেপুটি ডিরেক্টর (এফ ও এ) আব্দুল ওয়াদুদ প্রস্তাব করেন— মতিঝিল ও সচিবালয়গামী যাত্রীদের জন্য টঙ্গী ও কমলাপুরে আরও অধিক শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা এবং কমলাপুর থেকে সংযোগ বাস ব্যবহারের মাধ্যমে মূল রাস্তার ট্রাফিক চাপ কমানো যায়। এছাড়া, তিনি ঢাকার রাস্তায় একদিন জোড় ও অন্যদিন বিজোড় নম্বর সম্বলিত ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোরও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব রাখেন।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন তরফদার বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে এবং রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে।’
এছাড়া ট্রাফিক দক্ষিণ জোনের ডিসি মূল সড়কে ধীরগতির যানবাহন বন্ধ করার বিষয়ে মতামত দেন।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তগুলো হলো—ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ফার্মগেট থেকে তেজতুরি পাড়া হয়ে সাত রাস্তা পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভারসন চালু, ওই রাস্তার বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা, বাংলামোটর থেকে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সামনে দিয়ে গ্রিন রোড হয়ে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভারসন চালুরও সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ডিএমপি ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা হয়েছে। মেট্রোরেলের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-৩ (এমআরটি লাইন-৬)-কে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সভায় প্রয়োজন মাফিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, প্রকল্প এলাকার কারওয়ান বাজারের আন্ডারপাসের বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করা, ফুটপাত ভেঙে রাস্তা আট মিটার চওড়া করা যায় কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ব্যবস্থাগ্রহণ, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করা, যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনি এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেট্রোরেল প্রকল্পের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈঠকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম জোনের ডিসি লিটন কুমার সাহা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের নির্মাণের কারণে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কের যানজট নিরসনে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।’