প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি অনলাইনে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলিতে দুর্নীতি ও হয়রানির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিকের এসব দুর্নীতি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে অনলাইনে বদলি পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এর মাধ্যমে অনলাইনে ঘরে বসেই বদলির আবেদন করতে পারবেন শিক্ষকরা। এতে বন্ধ হবে তদবির বাণিজ্য।

শিগগিরই অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দেবে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, শিক্ষকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন তাই আমরা অনলাইনে বদলির ব্যবস্থা করবো। ঘরে বসেই শিক্ষকরা আবেদন জমা দিতে পারবেন। ঢাকায় এসে দৌড়াদৌড়ির দরকার হবে না। প্রাপ্যতা সাপেক্ষে শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন।

চলতি বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদলির শেষ সময় ছিল গত ৩১ মার্চ। তার এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রতিদিন শত শত শিক্ষক ভিড় করেন অধিদফতরে। অনেকেই অভিযোগ করেন বদলিতে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। তাদের অভিযোগ শূন্যপদের অনুমোদন নিয়েও দিনের পর দিন অপেক্ষা করা শিক্ষকরা বদলি হতে পারছেন না। আবার যাদের শূন্যপদের অনুমোদন নেই তারাও বদলি হচ্ছেন। আবেদন করার দুই দিনের মধ্যেও অনেককে বদলি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বদলি নিয়ে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। অধিকাংশ বদলি অর্থের বিনিময়ে করা হয়েছে। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক বদলি করা হয়েছে। বদলির আবেদনের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শূন্যপদের তালিকা দিলেও সেসব প্রার্থীকে বদলি না করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তারা আরও জানান, এর ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শূন্যপদের তালিকা এনে ডিপিইতে জমা দিলেও তাদের বদলি করা হয়নি। অনেকের আবেদনও গায়েব হয়ে যাচ্ছে। যেসব শিক্ষককে আবেদন করতেও দেখা যায়নি, টাকা দিয়ে তারা পচ্ছন্দের প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়ে গেছেন। কেউ কেউ যে প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছেন তাকে সেখানে না দিয়ে ভিন্ন বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিইর মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, টাকা দিয়ে বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যারা বলছে তারা ঠিক বলছে না। নিয়ম অনুযায়ী বদলি করা হচ্ছে। এক প্রতিষ্ঠানে দুজন আবেদন করলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আবেদনকারীর ফাইল গায়েব হয় না, আগে আবদেন করায় অনেক সময় ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না। বদলির ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। মানবিক কারণেও অনেককে গুরুত্ব দেয়া হয়, বদলি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বেশকিছু শিক্ষক বদলি করা হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, এসব পরিস্থিতি সামাল দিতেই অনলাইন পদ্ধতিতে সহকারী শিক্ষক বদলি করার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিগগিরই অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দেবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন জমা নেওয়া হলে শিক্ষকদের ভোগান্তি কমবে। বন্ধ হবে দুর্নীতি ও তদবির বাণিজ্য।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর