বগুড়া শেরপুরে চরমপন্থীর গুলিতে পুলিশের এএসআই নান্নু আহত ॥ এলাকায় আতংক

বগুড়া শেরপুরে ভবানীপুর বাজারে ৮ এপ্রিল সোমবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে টহলরত পুলিশের ওপর চরমপন্থীদের হামলায় পুলিশের এক সহকারী উপ- পরিদর্শক (এএসআই) নান্নু মিয়া (৪২) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ পাল্টাগুলি চালালে চরমপন্থীরা পালিয়ে যায়। এতে গুরুতর আহত এএসআই নান্নুকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন শেষে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে হঠাৎ করেই আবারো চরমপন্থীদের আনাগোনা ও উৎপাত-মহড়ায় আতংক বিরাজ করছে পুরো সীমান্তবর্তী এলাকায়।

সরেজমিনে জানা যায়, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার এলাকায় পূর্ব থেকেই নিষিদ্ধ চরমপন্থীদের উৎপাত ও প্রতিবছরই বাজারের নৈশ প্রহরীদের জিম্মি করে তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টার লাগায়। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন থানা পুলিশের অভিযানে চরমপন্থিদের উৎপাত অনেকটা কমে গেলেও নতুন করে চরমপন্থী দলের ১৫/২০ জনের একটি দল গত ৮ এপ্রিল সোমবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের ‘দুনিয়ার সর্বহারা ও নিপীড়িত জনগণ এক হও’ এবং ৯ এপ্রিল পাবনায় কয়েকটি বিপ্লবী সংগঠনের নামে রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের ৬১৪ জন সদস্য’র নাটকীয় আত্মসমর্পনকে প্রত্যাত্থান করুন সহ বিভিন্ন শিরোনামে হাতে লেখা পোস্টার ভবানীপুর বাজারের বিভিন্ন ঘরের দেয়ালে লাগাচ্ছিল। এমতাবস্থায় ওই রাতে শেরপুর থানা পুলিশের নিয়মিত রাত্রিকালীন টহল দল উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) নান্নু মিয়াসহ পুলিশের দুই কনস্টেবল ভাড়ায় চালিত সিএনজি অটোরিকশায় করে ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন।

টহল টিমের গাড়িটি ভবানীপুর মন্দির সড়ক দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিল তখন চরমপন্থীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এতে এএসআই নান্নু মিয়ার ডান পায়ের হাঁটুতে গুলি লেগে গুরুতর আহত হয় এবং পুলিশও পাল্টা ৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। পরে খবর পেয়ে থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আহত এএসআই নান্নুকে উদ্ধার করে ওই রাতেই প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর
রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। এ প্রসঙ্গে শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম জানান, উপজেলার ভবানীপুর বাজার এলাকায় পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, উত্তরাঞ্চল শাখার ব্যানারে চরমপন্থীদের সাঁটানো পোস্টারের ‘দুনিয়ার সর্বহারা ও নিপীড়িত জনগণ এক হও, পাবনায় কয়েকটি বিপ্লবী সংগঠনের নামে রাষ্ট্রীয় চক্রান্তে ৬১৪ জন সদস্যের নাটকীয় বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, গণযুদ্ধের সমর্থনে সকল শ্রেণি পেশা ও নিপীড়িত জাতি-জনগণের সংগঠন গড়ে তুলুন এবং গ্রামে গ্রামে গোপন গেরিলা স্কোয়াড গড়ে তুলুন, সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে গণমুক্তি বাহিনীতে যোগদিন, মার্কসবাদ, লেনিনবাদ জিন্দাবাদ।’ সহ ৮টি দাবী সম্বলিত পোস্টার বিভিন্ন দেয়ালে সাটিয়ে দেয়। তবে চরমপন্থীদের এসব সদস্য (৬১৪ জন) ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার পাবনায় আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদবলেন বাজারের নৈশ প্রহরীদের সূত্রে জানতে পেরেছি, ২০/২৫ জনের সশস্ত্র চরমপন্থীরা পুলিশের ওপর হামলা শেষে চরমপন্থীরা পাকা সড়ক দিয়ে হেঁটে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার মধ্যে ঢুকে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর জানান ঘটনার সময় চরমপন্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ পাল্টা পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল। তবে এসব গুলি চরমপন্থীদের কারও গায়ে লেগেছে কিনা তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ টিমের সিএনজি চালক ও অপর দুই পুলিশ সদস্য অক্ষত আছেন। তবে গুরুতর আহত পুলিশ কর্মকর্তা নান্নু মিয়াকে ওই রাত সোয়া ১২ টার দিকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রাত তিনটার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শের ই বাংলা নগর পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার সকালে তার অপারেশন শেষে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ এএসআই নান্নু মিয়া পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার কেদারপাড়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর