স্ত্রীকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করলেন বিসিএস পুলিশ লিটন

প্রিয়তমা স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে ওয়াদা করেছিলেন, বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে মেধায় ১ম-১০ম স্থানের মধ্যে থাকবেন তিনি। সেই থেকে জোর প্রস্তুতি। ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল তার জীবনের প্রথম বিসিএস।

পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, পুলিশ ক্যাডারে ঠিক ১ম স্থানই অধিকার করেছেন মিলিটারি একাডেমির সাবেক এই শিক্ষার্থী। যেন নিজেকে পুরস্কৃত করেছেন নিজেই।

অনিবার্য কারণে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অকাল অবসরে যান। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এমবিএ কোর্সে। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ায় উপহাস করতো অনেকেই। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না মো. হালিমুল হারুন লিটন।

বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করা লিটন এর আগে বেসিক ব্যাংকে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার বন্দচরপাড়া গ্রামে জন্ম নেন তিনি। বাবা মো. আজিবর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, আর মা হালিমা বেগম একজন গৃহিণী।

১ম স্থান অধিকার করা যেন অভ্যাস হয়ে উঠেছিল হালিমুল হারুন লিটনের। ১ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ১ম স্থান অধিকার করেছেন একাধারে। ফলে ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই থেকে এখনো বন্ধুরা ক্যাপ্টেন বলে ডাকে।

৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে পেয়েছেন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান। এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের সফল ইতি টানেন।

উচ্চ মাধ্যমিকের সফল সমাপ্তির পর বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, বুটেক্স, বাকৃবি ও ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পান লিটন। ভর্তি হন ঢাবির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সেনা-পুলিশের পোশাকের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল।

তাই ৩ মাস ক্লাস করেও পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের মিলিটারি একাডেমিতে। সেখান থেকে বিএসসি করেন এবং সেনাবাহিনীর অফিসার হন। মিলিটারি একাডেমিতে ভালো ফলাফল করায় পেয়েছেন কুদরত-এ-খোদা স্বর্ণপদক ও ওসমানী স্বর্ণপদক।

যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের প্রতি হালিমুল হারুন লিটনের পরামর্শ, নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিন যে আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করেন। রেফারেন্স বইয়ের প্রয়োজনীয় অংশগুলো পড়তে পারেন।

লিখিত পরীক্ষার খাতায় প্রচুর ডাটা, চার্ট দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশ সম্পর্কে প্রচুর জানার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত দেশি-বিদেশি পত্রিকা ও ‘মাসিক আর্টিকেলস অ্যান্ড কলামস’র মতো পত্রিকাগুলো পড়া যেতে পারে।

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করে সৎ পুলিশ অফিসার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে শপে দেওয়ার ইচ্ছা লিটনের। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন- আমি যখন মারা যাব; তখন আমার মৃতদেহ বহনকারী বাক্সটায় বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো থাকবে। রাষ্ট্রীয় সম্মানায় আমাকে বিদায় জানাবে সোনার বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর