আশুলিয়ায় অনুমোদন ও সনদবিহীন চিকিৎসকদের রমরমা ব্যবসা

রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় অনুমোদনবিহীন ফার্মেসীগুলিতে চলছে সনদবিহীন তথাকথিত ডাক্তারদের রমরমা চিকিৎসা ব্যবসা। প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই শিল্পাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ।

অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় এই ভুয়া চিকিৎসকদের সেবা প্রদানের নামে অবৈধ ব্যবসা কার্যক্রম চললেও দেখার কেউ নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ডিগ্রির সনদ না থাকলেও অনিবন্ধিত এসকল ভুয়া চিকিৎসকগণ এই এলাকায় বসবাসরত কর্মজীবি শ্রমিকদের প্রতারিত করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিন বেশ কয়েকটি ফার্মেসী ও দন্ত চিকিৎসালয়ে গেলে ভয়ংকর সব তথ্য সামনে আসে। আশুলিয়ার বুড়িপাড়া এলাকায় ছাব্বির ডেন্টাল কেয়ার। সাইন বোর্ডে লেখা আছে ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান (বিডিএস)। জনৈক বাবুল নামের এক ব্যক্তি এই ডেন্টাল কেয়ারের মালিক। জানা যায়, ডাঃ মাহফুজ আসেন কালে ভদ্রে, আর সব সময় রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন ছাব্বির ডেন্টাল কেয়ারের মালিক বাবুল। বাবুলের কাছে এই প্রতিবেদক ডাক্তারের ভিজিটিং কার্ড চাইলে তিনি একটি কার্ড দিয়ে বলেন এটাই ডাঃ মাহফুজুর রহমানের কার্ড। তবে কার্ডে থাকা মোবাইল নাম্বারে ফোন দিতে উদ্যত হলে বাবুল বলেন, ওখানে যে নাম্বার দেওয়া আছে ওটা আমার নাম্বার।

পরে মুঠো ফোনে ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি মাঝে মধ্যে আসেন। তবে ডাঃ মোঃ মাহফুজুর যে ভুয়া দন্ত চিকিৎসক তার প্রমান মিলে সাইন বোর্ডে দেওয়া তার বিডিএস কোড নাম্বার যাচাই করে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায়, মাহফুজ যে কোড নাম্বার ব্যবহার করেছেন ওই নাম্বার ডাঃ চুন্নু রায় নামের এক চিকিৎসকের যার ঠিকানা দেওয়া আছে কুমিল্লা।

এদিকে ছাব্বির ডেন্টাল কেয়ারের মালিক বাবুলের নিকট তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অপকটে জানান এসএসসি পাস করেছেন এবং চিকিৎসার উপর তার কোনো কোর্সও করা নেই।

আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় রাইন ডেন্টাল কেয়ার নামের একটি দন্ত চিকিৎসালয় নোংরা পরিবেশের এক অস্বাস্থ্যকর গলির ভিতরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এম, এ, কাশেম নামের এক ব্যক্তি যার বাড়ি খুলনার দীঘলিয়া উপজেলায় তিনি এই ডেন্টাল কেয়ারের মালিক। এই কাশেমের ভিজিটিং কার্ডে বিভিন্ন ডিগ্রির কথা লেখা আছে যেমন, S.D.T (A.M.K.S), D.M.A.F (Dhaka)। অথচ তাকে এই ডিগ্রি গুলির পূর্ণরুপ কি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতে পারেন নাই এবং এসংক্রান্ত কোনো ধরণের সনদও দেখাতে পারেন নাই।

এভাবে এইসব প্রতারক দন্ত চিকিৎসা সেবার নামে শুধুই রোগীর সঙ্গে প্রতারণাই করছেন না একইসঙ্গে দাঁতের চিকিৎসার মতো সংবেদনশীল চিকিৎসা যথাযথভাবে না করে রোগীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। এসকল ভুয়া চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন তা স্ট্যারিলাইজেশন বা জীবাণুমুক্ত করণের ব্যবস্থা না নিয়েই চিকিৎসা করছেন। ফলে রোগীর জীবাণুসংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

এপ্রসঙ্গে জুনায়েদ আলি নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমার বাসা এই পাড়াতে (বুড়িপাড়া), আমার ছেলের দাঁতের সমস্যা হওয়ায় ছাব্বির ডেন্টাল কেয়ারে চিকিৎসা নিতে এলে আমার ছেলের একটি দাঁত তুলে দেয় তারা। পরে জীবাণুসংক্রমিত হয়ে ছেলের অবস্থা খুুুবই খারাপ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ছেলেকে ভালো করতে হয়।

আরো একটি উদ্বেগের বিষয় হলো, ফার্মেসী ব্যবসার পাশাপাশি পল্লী চিকিৎসকগণ নিজেরাই ডাক্তার সেজে রোগীদের চিকিৎসা করছেন। নিজেরাই প্রেস্ক্রাইব করছেন এবং প্রেসক্রিপশনে নামের আগে ডাঃ শব্দটি ব্যবহার করছেন যা বিধিসম্মত নয়। এই শিল্পাঞ্চলে হাটে-বাজারে, অলিতে-গলিতে ফার্মেসীর ছড়াছড়ি। আর এসব ফার্মেসীর সাথেই থাকে ছোট্ট একটা কক্ষ যার বাইরে লাল অক্ষরে লেখা থাকে ‘ডাক্তার আছেন’। আর যাদের সনদ আছে এমন কারো নাম পদবী সহ লেখা থাকে। অথচ কালেভদ্রে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সামান্য সময়ের জন্য হয়ত পদধূলি দেন। কিন্তু ফার্মেসীর মালিক নিজেই ডাক্তার সেজে রোগীদের চিকিৎসা করেন। আর স্বল্প আয়ের অবহেলিত শ্রমিকদের এসব ভুয়া ডাক্তারদের কাছে না এসেও উপায় থাকে না।

কয়েকজন এমন ভুয়া চিকিৎসকদের কাছ থেকে শিল্পাঞ্চলে তাদেরকে অবৈধ চিকিৎসা কাজে সহায়তা করে এমন একটি ফাউন্ডেশনের নাম জানা গেছে। তবে তারা ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজী না হওয়ায় সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম আপাতত প্রকাশ করা হলো না। এবিষয়ে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধানের পর বিষয়টি সামনে আনা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর