দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সিএসই বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

এদিকে এঘটনায় ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেবার কথা জানালেও এ ব্যাপারে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকরা বলেছেন তাকে শিক্ষক পলিটিক্সের শিকার হতে হয়েছে।

জানাগেছে, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আক্কাস আলী গত ডিসেম্বর মাসে ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্রীকে থিসিসের নামে প্রায় সময় নিজ বাড়িতে ডেকে নিতেন। এসময় তিনি বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দেয়াসহ যৌন হয়রানি করেন।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয়।

দুই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আক্কাস আলীর শাস্তির দাবিতে রোববার সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানান। শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

যৌন নিপীড়নের শিকার দুই শিক্ষার্থী জানান, ওই শিক্ষক কৌশলে দুই শিক্ষার্থীসহ তিন শিক্ষার্থীর থিসিসের দায়িত্ব নেন। তার তত্ত্বাবধানে তিন ছাত্রী মিলে একটি গ্রুপ গঠন করে কাজ শুরু করেন। সে অনুযায়ী সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান আক্কাস আলী সুপারভাইজার হন। এরপর বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষক তাদের বাসায় ও ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকতেন এবং শরীর স্পর্শ করতেন। মোবাইল ফোনে ডেকে এনে তাদেরকে কুপ্রস্তাব দিতেন। পরীক্ষার ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি এ সুযোগ নিতেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।

তারা আরো জানান, সম্প্রতি তাদের অভিযোগপত্র কে বা কারা ফেসবুকে পোস্ট করে দেয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য লিখে নিন্দা জানান।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, শিক্ষক আক্কাস আলী তাকে থিসিসে কাজ আছে বলে একা বিভাগে ডেকে নিয়ে যান। পরে সেখানে তিনি আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন। এতে বাধা দিলে ওই শিক্ষক তাকে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। আর রাজি হলে থিসিসে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার লোভ দেখান।

এ অবস্থায় তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পরে তিনি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। শিক্ষকদের পরামর্শে তিনি বিভাগীয় প্রধানের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক নারীঘটিত ঘটনার পর সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলছে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও তারা জানান।

এব্যাপারে গোপালগঞ্জ জেলা সুজনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী ও সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হাবিবুর রহমান বলেন, বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘটনার পরও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন ঘটনা ঘটেই চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

অভিযুক্ত সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আক্কাস আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একই বিভাগের অন্য শিক্ষকের সাথে বিভাগীয় প্রধান হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা থাকায় তাকে ফাঁসানো হযেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্সের শিকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর