বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা কেন?

হঠাৎ করেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ডাকসু নির্বাচন থেকেই অস্থিরতা চলছে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তাল ববি। এদিকে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত মঙ্গলবার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ঢাবি শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরের ঘটনার অভিযোগ দিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনসহ আরও অনেকে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয় ও অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর ডিমও ছুঁড়ে মারেন। এর প্রতিবাদে তারা ভিসির বাসভবনের সামনে রাতভর অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। বুধবার সকালে ভিসির সঙ্গে বৈঠকে বসে নুরসহ অন্যরা। পরে নুরুল হক নুরসহ অন্যদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা। বুধবার ঢাবির টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে আল্টিমেটামে নুরুল হক নুর আগামীকাল সোমবারের মধ্যে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আল্টিমেটাম দেন। যদি তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন নুর।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করেন উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। এরপর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। তাদের অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল শনিবার বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৈঠকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপাচার্য আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে না এমন আশ্বাস দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অব্যাহতি দিতে সম্মত হয়। এর প্রেক্ষিতে আজ রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো খুলে দেয়া হলেও আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, উপাচার্যের পদত্যাগ বা তাঁর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত কাগজ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ও একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। আন্দোলন থেকেও তারা সরে আসবেন না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আটক ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা প্রত্যাহার, প্রক্টরের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ রেখে তার সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। বন্ধ করে দেয়া হয় শাটল ট্রেন। দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। কর্তৃপক্ষের এই আহ্বানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাড়া দেয়নি। পরে পুলিশ এসে তাদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ছাত্রলীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এরপর মূল ফটক থেকে সরে ছাত্রলীগ কর্মীরা শাহ আমানত ও সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেয়। সেখান থেকেই তারা পুলিশের উদ্দেশে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। আন্দোলনের মুখে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের কোনো বাস শহরে যেতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে থাকা অন্তত ৩০টি বাস ও গাড়ির চাকা কেটে দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন আগে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাননি। এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে আজ রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা-বর্জন করে একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত বৈধ ভিসি নিয়োগ দিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভিসি নিয়োগের দাবিতে গতকাল শনিবার আন্দোলনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১২টায় ভিসি নিয়োগের দাবিতে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে পুনরায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থীরা এবং নতুন ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর