অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল ফেব্রুয়ারিতে ৭৮ , মার্চে ৭৭৭০!

বিদ্যুৎ ব্যবহারের শুরু থেকে পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ঘেঁটে এ তথ্য জানা যায় যে কখনো ১০০ টাকারও বিদ্যুৎ বিল আসেনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৫৭ টাকা ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২১ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৭ হাজার ৭৭০ টাকা যা বিগত মাসের বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে প্রায় ৯৮ গুন বেশি।

এই বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক মোস্তফার (৫৫)। তিনি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রামশালা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা। মোস্তফা তাঁর ছেলে শাহিনুর রহমানের নামে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগটি নেন। যার হিসাব নম্বর ০৭/৯২৫/১২১০।

মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মোস্তফা গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছুটে আসেন আক্কেলপুর প্রেসক্লাবে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি জানান। মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতে বসবাস করেন। প্রায় আট মাস আগে ওই বাড়িতে তাঁর ছেলে শাহিনুর রহমানের নামে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেন। সে সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন বাড়ির দরজার ডিজিটাল বৈদ্যুতিক মিটার লাগিয়ে দেন। বাড়িতে তাঁর একটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন, একটি ফ্রিজ, একটি টেবিল ফ্যান ও একটি বাল্ব ব্যবহার করা হয়।

মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিল হাতে পাওয়ার পর থেকে মোস্তফা ভয়ে রাতের বেলায় শুধু কয়েক ঘণ্টার জন্য একটি বাল্ব জ্বালান। এ ছাড়া ফ্রিজ, টিভি ও টেবিল ফ্যান প্রায় সময় বন্ধ রাখেন। তিনি বাড়িতে ভ্যানের ব্যাটারিতেও চার্জ দেন না। বাড়তি বিলের ভয়ে বিদ্যুচ্চালিত নতুন কোনো কিছু কেনেননি তিনি।

মোস্তফা বলেন, বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ নেওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ১০-১৫ ইউনিটের বেশি কখনো বিদ্যুৎ বিল আসেনি। হঠাৎ করেই মার্চ মাসে ৭১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে মোট ৭ হাজার ৭৭০ টাকার বিল বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। ১১ এপ্রিলের মধ্যে বিলম্ব মাশুল ছাড়া এই বিল পরিশোধ করা যাবে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল হাতে পাওয়ার পর থেকেই আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের দুশ্চিন্তায় রাতেও চোখে ঘুম আসছে না। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের প্রতিকার চেয়ে গত বুধবার জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) বরাবর একটি আবেদন করেছি।’

বিদ্যুৎ বিলগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছরের ১৫ আগস্ট মোস্তফার বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ নেওয়া হয়। তখন মিটার রিডিং ছিল শূন্য ইউনিট। ১৫ আগস্ট থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৪২ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। ৪২ ইউনিটের জন্য ২৭৯ টাকার বিল দেওয়া হয়। ডিসেম্বর মাসের বিলে ৮ ইউনিটের ৬৯ টাকা বিল, জানুয়ারি মাসে ৫ ইউনিটের ৫৭ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ ইউনিটের মোট বিল ৭৮ টাকা। কিন্তু মার্চ মাসের বিলে দেখা যায় বিশাল ফারাক। ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে প্রায় এক শ গুণ বিদ্যুৎ বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭০ টাকা। তিনি এই বিল এখনো পরিশোধ করেননি।

মার্চ মাসের ওই বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী (২৫ ফেব্রুয়ারি) মিটার রিডিং ছিল ৬৫ ইউনিট, বর্তমানে (২০ মার্চ) ৭৮০ ইউনিট মিটার রিডিং নেওয়া হয়। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের তিন দিন আর মার্চ মাসের ২০ দিন মোট ২৩ দিনে ৭১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়েছে। বিলটি ২৩ মার্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।

সোনামুখী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ডি এম রাহেল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোস্তফা রামশালা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন। তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ বিল আগে কখনো ১০০ টাকাও হয়নি বলে শুনেছি। অথচ মার্চে সেই বাড়ির বিদ্যুৎ বিল দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭০ টাকা। এটা অস্বাভাবিক।’

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) গোবিন্দ চন্দ্র শীল বলেন, অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর