প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেরোবিতে হচ্ছে না হল সমাপনী

একসাথে হলে পাঁচ বছর কাটিয়েছি। চেয়েছিলাম সুন্দর একটা সমাপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করবো।

বান্ধুবী, সিনিয়র আপুদের হল সমাপনী দেখেছি। দেখেছি সিনিয়রদের হল সমাপনীর মতো আনন্দঘন কিছু আয়োজন।

ভেবেছিলাম আমাদেরও হল সমাপনীর মাধ্যমে বিদায় দেয়া হবে। তবে সেটা আর হলো কোথায়। পেলাম না হল সমাপনী।’ এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের বিভাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তপন কুমার রায়।

জানা যায়, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য হলো প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষ শেষে প্রতিটি হলের উদ্যোগে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাপনী উৎসব উদযাপন করা। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাঁদা ও সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসনের বরাদ্দের মাধ্যমে এই হল সমাপনী পালন করা হয়।

হল প্রশাসনের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেখানে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা বিদায়ী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এছাড়া আয়োজন করা হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আর হল শিক্ষার্থীরা ব্যান্ড পার্টিসহ র‌্যালি, সাইকেল মিছিল, রং মাখামাখি, বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া, ভুরিভোজ, প্রীতি ফুটবল ও ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ মুখতার ইলাহী হল ও মেয়েদের জন্য শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল রয়েছে। ২০১৬ সালে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সর্বপ্রথম ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয়ভাবে হল সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রতি বছর মেয়েদের হলে হল সমাপনী অনুষ্ঠিত হলেও ছেলেদের দুটি হলে হল সমাপনীর কোন উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।

সোমবার ফজিলাতুন্নেছা হলে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের হল সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েদের হলে হল সমাপনী হলেও ছেলেদের হল সমাপনী না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্বয়ং হল প্রভোস্টের কাছে। এই দুই হলের শিক্ষার্থীরা অতিদ্রুত হল সমাপনীর দাবি করেছেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে মেয়েদের হলে সমাপনী অনুষ্ঠান হলেও এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ছেলেদের দুই হলের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত ছেলেদের হলে কোনো শিক্ষার্থীদের হল সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের হল জীবনের সর্বশেষ স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত বা একধরনের না পাওয়ার বেদনা নিয়েই তাদের ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের সবারই একটা প্রত্যাশা থাকে হল জীবন শেষ করার পর স্মৃতিচারণমূলক কোনো ক্রেস্টের মাধ্যমে হল জীবনের সমাপ্ত করা। কিন্তু আমরা সেটা পাইনি। আশা করি পরবর্তীতে যারা আসবে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই হল সমাপনীর ব্যবস্থা করবেন।’

তবে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জোরালো দাবি আসার পরেও দুই হলের মাত্রাতিরিক্ত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অবস্থান, বারংবার নোটিশ দিয়ে বৈধ আবাসিকতার জন্য বলা হলেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোন তোয়াক্কা না করার কারণে মূলত এই দুই হলে হল সমাপনীর আয়োজন করা হচ্ছে না দাবি করে হল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল কবির সুমন বলেন, আমরা যখন শিক্ষার্থী ছিলাম আমরাও হল সমাপনী পেয়েছি। হল সমাপনী শিক্ষার্থীদের কাছে আবেগের এবং ন্যায্য অধিকারের একটি বিষয়। অবশ্যই এটার দাবিদার শিক্ষার্থীরা। সমাপনী আয়োজনের পেছনে শিক্ষার্থীদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে ঠিক তেমনি হল প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। হল প্রভোস্ট যদি জোড়ালো উদ্যোগ নেন হল সমাপনী সম্ভব।

জানতে চাইলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সদস্য ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শরীফা সালোয়া ডিনা বলেন, গত চার বছর যাবৎ আমার হলে হল সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। হল সমাপনী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অধিকার। যেসব হলে সমাপনী হচ্ছে না সেসব হলে সমাপনী জরুরী না হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় থেকে বঞ্চিত হবে।

এ ব্যাপারে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রভোস্ট (চলতি দায়িত্ব) তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, একযোগে সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অন্য হলের প্রভোস্ট বডির সাথে ভিসির সাথে কথা হয়েছে আজ।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হলে মাত্রাতিরিক্ত অনাবাসিক শিক্ষার্থী দিয়ে ভরা। অল্প কিছু আবাসিক শিক্ষার্থীর সিট ভাড়া পাই। গত প্রশাসনের আমলে সব অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে তুলে দেওয়ার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে হলের সিট বৈধ করলে সমাপনী অনুষ্ঠান করা সম্ভব বলে মনে করেন এই হলের প্রভোস্ট।

এদিকে শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট (চলতি দায়িত্ব) ফেরদৌস রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর