স্পিডব্রেকার দিদি বনাম এক্সপায়ারি মোদি

ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে রাজনৈতিক তর্ক বিতর্ক। তবে বুধবার এই বিতণ্ডা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ওই একই দিনে পশ্চিমবঙ্গে সমাবেশ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর একেজন আরেকজনের বিরুদ্ধে করেছেন নানা অভিযোগ। তাদের করা বক্তব্যের মধ্যে‘স্পিডব্রেকার’ ও ‘এক্সপায়ারিবাবু’শব্দ দুটি

নির্বাচনী প্রচারে প্রথম দফায় রাজ্যে এসে শিলিগুড়ির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উন্নয়নের পথে ‘স্পিডব্রেকার’ বলে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দু’ঘণ্টার মধ্যেই দিনহাটায় তৃণমূলের মঞ্চ থেকে মোদিকে ‘এক্সপায়ারিবাবু’বলে পাল্টা কটাক্ষ করেন মমতা।

শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে বিজেপির সভা থেকে এ দিন মোদির অভিযোগ, ‘পাঁচ বছরে দেশে বিকাশের নতুন গতি এসেছে। তবে বাংলায় সেই গতি নেই। কাজ হচ্ছে না। তার কারণ এখানে একটা স্পিডব্রেকার আছে। তার নাম দিদি।’

আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান যোজনা, রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট আইন এবং চা-বাগানের কথা উল্লেখ করে মোদির অভিযোগ, রাজ্য সরকারের বাধায় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। মোদির কথায়, ‘তাকে (মমতা দিদি) না সরালে কিছু হবে না!’

এর জবাবে মমতা বলেন, ‘পাঁচ বছরে কী উন্নয়ন করেছি, জানতে চাইছেন? মিথ্যে কথা না বলে আপনি পাঁচ বছরে কী করেছেন, তার কৈফিয়ত দিন। ক্ষমতা থাকলে সরাসরি আমার সঙ্গে বিতর্কে বসুন। আপনি প্রশ্ন করবেন, আমি তথ্য, রেকর্ড নিয়ে তার জবাব দেব।’

সভার ভিড়কে ইঙ্গিত করে এ দিন মোদি বলেন, ‘এই জনসমুদ্র দেখেই বুঝতে পারছি দিদির নৌকা ডুবছে!’

যার জবাবে দিনহাটায় মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘আগে দিল্লি সামলাও। পরে বাংলা দেখবে। বাংলার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।’

কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্য সূর্যকান্ত মিশ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে দেশের অগ্রগতির পথে যদি কোনও প্রধানমন্ত্রী স্পিডব্রেকার হয়ে থাকেন, তা হলে সেটা তিনিই। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মোদি যে অভিযোগগুলি তুলেছেন, তার সবটা অসত্য নয় ঠিকই। কিন্তু এ প্রত্যেকটাই তার বিরুদ্ধে অনেক বেশি করে প্রযোজ্য। এটা তো একটা রাজ্য। উনি দেশ চালিয়েছেন। অনেক বেশি দায়িত্ব তার। জবাবদিহির দায়ও তার।’

এরপরই সূর্যবাবু মোদির বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন,‘পরে কী হবে, সে পরের কথা। তার (মোদি) তরী তো আগে ডুববে!’

বুধবার প্রধানমন্ত্রী মোদি আরো বলেন,‘‘মমতা গরিবকে গরিব রাখতে চান। না হলে রাজনীতি করতে পারবেন না তিনি।’ চিটফান্ড প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘চিটফান্ড কেলেঙ্কারি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। গরিবের টাকা গিয়েছে চিটফান্ডে। আর সেই টাকা নিয়ে দিদির মন্ত্রী, বিধায়ক, সঙ্গীরা কেটে পড়েছেন। তারা গরিবদের লুট করেছেন।’

জবাবে মমতা বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সাড়ে সাত বছরে ২ কোটি ১০ লক্ষ ছেলেমেয়েকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। স্বরোজগার যোজনায় ৪ লক্ষ মানুষ সাহায্য পেয়েছেন।’

আয়ুষ্মান ভারতের পাল্টা হিসেবে তিনি জানান, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষকে। হাসপাতালে এখন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাস্তা তৈরি, গ্রামীণ আবাসন এবং একশো দিনের কাজে যে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে এক নম্বরে, তাও জানান তিনি। একই সঙ্গে উল্লেখ করেন সবুজসাথী সাইকেল, ৯৮% মানুষকে২ কেজি টাকা দরে চাল দেওয়ার কথাও।

দুই নেতার বিতর্কে এসেছে টাকা লুটের প্রসঙ্গও। মমতা বলেন, ‘তৃণমূলকে বলছে লুটেরা! তোমার টাকা খেয়ে লুটেরা, নাকি তোমার বিজেপির টাকা খেয়ে লুটেরা?’

পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আপনারা লুটেরাকে টিকিট দেন। আর্মস ডিলারকে টিকিট দেন।’

চিটফান্ড প্রসঙ্গে আরও আক্রমণাত্মক মমতা বলেন, ‘ওই কেলেঙ্কারি সিপিএমের আমলে হয়েছে। কিন্তু আপনারা সিপিএম, কংগ্রেসের কোনো নেতার গায়ে হাত দিয়েছেন?’এক ধাপ এগিয়ে তার অভিযোগ, ‘বিজেপির উপমুখ্যমন্ত্রীও এমন চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তার গায়ে হাত দিয়েছেন?’

মমতার সাফ কথা, ‘গায়ের জোরে মিথ্যা বলেছেন এক্সপায়ারিবাবু প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ এক্সপায়ার করে গিয়েছে।’

সূত্র: আনন্দবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর