পাঁচ হাজার ভবনের ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই

ঢাকা মহানগরীর ৫ হাজার ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের কোনও ছাড়পত্র বা অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার (ফায়ার সেফটি প্ল্যান) অনুমোদন নেই। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশসহ মোট ১০টি অনুমোদনের পর রাজউকের বিল্ডিং বানানোর ছাড়পত্র দেওয়ার কথা।

কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন না দেওয়ার পরও ৫ হাজার ভবন কিভাবে নির্মিত হলো তা একমাত্র রাজউকই জানে। এমন মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজউকের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্রের তোয়াক্কা না করেই রাজউক অবৈধভাবে নির্মিত ভবনে বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে। ফলে একের পর এক ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আর প্রাণহানীর ঘটনা।

১০টি বিভাগ থেকে ছাড়পত্র পেতে টেবিলে টেবিলে উৎকোচ দিতে হয়। এমন অভিযোগ অহরহ পাওয়া যায়। ভবন নির্মাণ কাজে একাধিক ভবন মালিক এর সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ঘুষ ছাড়া ছাড়পত্র মেলে না।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ারে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল না। ভবনে ছিল না আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থাপনা। এ কারণে আগুন নেভাতে কিছুটা বিলম্ব হয়।

তিনি বলেন, রাজধানীর প্রায় ৫ হাজার ভবন ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই। জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র বা অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার অনুমোদন বাধ্যতামূলক থাকলেও এর কোনটিই ছিল না এফ আর টাওয়ারে।

গত জানুয়ারি মাসেও ভবন কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস তরফ থেকে। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। ফায়ার সার্ভিসের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি আছে। কিন্তু ভবনে যদি আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থাপনা না থাকে তাহলে যন্ত্রপাতি দিয়ে কি হবে? সেখানে ফায়ার ফাইটিং করতে বেগ পেতে হবে।

সরকার অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে ২০০৩ সালে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ নামে একটি আইন করে। এই আইন অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরে বহুতল ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।

মূলত ভবনের সামনে সড়কের প্রশস্ততা, নকশা অনুসারে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা, ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ, কাছাকাছি পানির সংস্থান, গাড়ি ঢুকতে পারবে কি না এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ছাড়পত্রটি দেয় ফায়ার সার্ভিস। তারপর এই ছাড়পত্র দেখিয়ে রাজউক থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে হয়।

নির্মাণকাজ আংশিক বা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর ভবনটি ব্যবহারের জন্য আবার রাজউকের কাছ থেকে বসবাস বা ব্যবহারের সনদ নিতে হয়। এই সনদ দেওয়ার সময় আগে জমা দেওয়া নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মিত হয়েছে কি না, তা দেখে রাজউক। কিন্তু বাস্তবে এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করে না রাজউক।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আর্কিটেকট ও প্রকৌশলীদের। এই পুরো বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব রাজউকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। এক্ষেত্রে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ কাজে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে।

রাজউকের উৎকোচ বাণিজ্যের কারণে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতিকালে নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৩ জন প্রাণ হারান। এরপর অতি সম্প্রতি চকবাজারে অগ্নিকান্ডে মারা যান ৭১ জন। সর্বশেষ বনানীর অগ্নিকান্ডে ২৬ জন মারা যান।

যখনই কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তখন রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদন্তের নামে হৈচৈ শুরু করে দেয়। অবৈধ ভবন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল উচ্ছেদ সব করার ঘোষণা দেয়। আসলে এসব লোক দেখানো। আসলে ওই সব বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তা এসব অনিয়মের সহযোগী। অবৈধ ভবন ও কেমিক্যাল উচ্ছেদে তাদের কাছ থেকে কি সাড়া পাওয়া যাবে। তাদের এসব ঘোষণা নগরবাসীর কাছে হাস্যকর। আর তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কারোর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

রাজউকের অনেক পিয়নও কোটিপতি। কোন শিল্পপতি ব্যবসা করেও এত দ্রুত ধনী হতে পারেন না-যা রাজউকে সম্ভব। রাজউকের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর