মোকাব্বির শপথ নিলেই বহিষ্কার

সিলেট-২ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন । তবে তার দল গণফোরাম বলছে, শপথ বিষয়ে দল থেকে তাকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। দলকে না জানিয়েই দলের প্যাড ব্যবহার করে তিনি শপথ গ্রহণের চিঠি পাঠিয়েছেন স্পিকারকে!

অপরদিকে, দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ছিল কেউ শপথ নেবে না। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর যেমন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন। মোকাব্বিরের বেলায়ও দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে গণফোরামের প্যাডে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, স্পিকার সময় দিলে সেই অনুযায়ী জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন মোকাব্বির খান।

এ বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় মোকাব্বির খান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। এ বিষয়ে দল থেকে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি মোকাব্বির খান দলের সাধারণ সম্পাদকের সই ছাড়াই দলীয় প্যাড ব্যবহার করে শপথ নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। এটা তিনি ঠিক করেননি। ২০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মোকাব্বির খান বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ থেকে আমাকে শপথ নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠির জবাবে আমি সোমবার (০১ এপ্রিল) শপথ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে স্পিকার বরাবরে চিঠি দিয়েছি। দশ মিনিটের মধ্যে চিঠির জবাবও পেয়েছি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আমার শপথ অনুষ্ঠান হবে।

যেহেতু দলের সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া মনোনয়নপত্র নিয়ে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন, সেক্ষেত্রে শপথ নেওয়ার আগে সাধারণ সম্পাদকের এমন কোনো লিখিত অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে মোকাব্বির বলেন, না সে ধরনের কোনো আইন নেই। আমি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শপথ নেব। আমি নিজে সই করেই চিঠি দিয়েছি।

গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, মোকাব্বির খান সত্য বলেননি। তার শপথ নেওয়ার বিষয়ে দল তাকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। গত ৩০ ডিসেম্বরের পরে এখন পর্যন্ত দলের কোনো সভায়ই এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে, মোকাব্বির শপথ নেবেন। বরং তিনি দলীয় প্যাড চুরি করে নিজেই সই করে চিঠি দিয়েছেন।

কোনো কোনো গণমাধ্যমে ড. কামাল হোসেন তাকে অনুমতি দিয়েছেন বলে মোকাব্বির খান যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে পথিক বলেন, গণফোরাম ড. কামাল হোসেনের একক সম্পত্তি নয়। এই দলের সকল সদস্য এটার মালিক। সুতরাং ড. কামাল হোসেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আমার জানামতে তিনি এমন সিদ্ধান্ত দেননি।

ড. কামাল হোসেনের নাকি গণফোরামের সিদ্ধান্তে শপথ নিতে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির বলেন, ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিতে যাচ্ছি।

তবে তিনি জানান, তার শপথের বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপির সঙ্গে সরাসরি কোনও কথা হয়নি। অফিসিয়ালি তাদেরকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ নিলে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হলো—জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন নাই বলেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। এই জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আপনার শপথ নেওয়ার পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে কোনও প্রভাব পড়বে কী—প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, আগামী দিনে কোনও প্রভাব পড়বে কিনা সেটা তো আমি বলতে পারি না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই , ৩০ তারিখ (৩০ ডিসেম্বর) যে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই সেই কথাটা সবাইকে সংসদে গিয়ে বলা উচিত বলে আমি মনে করি।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আটটি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে বিএনপি ছয়টি ও গণফোরাম দুটি আসন পায়। গণফোরামের সুলতান মনসুর মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ে নির্বাচিত হন। গত ৭ মার্চ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেওয়ায় তাঁকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়। একইদিন মোকাব্বির খানের শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর