স্বামীর ধর্ষণের ভিডিও করলেন স্ত্রী, বাড়িছাড়া ভুক্তভোগীরা

ঝালকাঠিতে গৃহপরিচারিকা এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বাসমালিক সমিতির এক সদস্য। নির্যাতিত পরিবার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, শহরের সুতালড়ি এলাকায় জেলা পরিষদের সামনে একটি চারতলা ভবনের মালিক ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির সদস্য এখলাছুর রহমান বিপ্লব ওরফে বিপ্লব দরবেশ (৩৮)। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় তিনি বসবাস করেন। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী তার সঙ্গে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন রাজাপুরে বাবার বাড়িতে। তার কোনো সন্তান নেই।

চার মাস আগে এখলাছুর রহমান শহরের পেট্রল পাম্প এলাকায় বাসা ভাড়া করে এক কিশোরীকে (১৬) তার দাদির সঙ্গে গৃহপরিচারিকা হিসেবে রাখেন। বাবা মা দূরে থাকায় ওই কিশোরী দাদির সঙ্গেই বসবাস করে। বিপ্লব দরবেশের প্রথম স্ত্রী মাঝে মধ্যে বাসায় থাকেন না, বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। স্ত্রী বাসায় না থাকার সুযোগে বিপ্লব দরবেশ ভাড়া করা ওই বাসায় গিয়ে ওই গৃহপরিচারিকাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।

বিষয়টি জানতে পারলে গত ২৫ মার্চ ওই কিশোরীকে ধর্ষণের সময় প্রথম স্ত্রী রুবিনা বেগম মোবাইল ফোনে কৌশলে তা ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। বিপ্লব কৌশলে ভিডিওটি স্ত্রীর কাছ থেকে তার মোবাইলে নিয়ে আসেন। ভিডিও দেখিয়ে গৃহপরিচারিকা ওই কিশোরীকে এলাকা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন বিপ্লব।

কিশোরী ঘটনাটি তার দাদিকে জানায়। দাদি স্থানীয় কয়েকজনকে এ ঘটনা জানায়। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে স্থানীয়রা গত শুক্রবার বৈঠক করলে ওই কিশোরীকে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ভবিষ্যতে বিয়ের খরচ বহনের দায়িত্ব নেন বিপ্লব। কিন্তু মীমাংসার পর বিপ্লব ওই কিশোরী ও তার দাদিকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। চলে না গেলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার কথা জানান। এমনকি ইন্টারনেটে ভিডিও ছাড়লে ওই কিশোরীর আর বিয়ে হবে না বলেও হুমকি দেন বিপ্লব। এ অবস্থায় শনিবার ভাড়া করা ঘরে তালা ঝুলিয়ে চলে যান নির্যাতিত ওই কিশোরী ও তার দাদি।

কিশোরীর দাদি অভিযোগ করে স্থানীয়দের জানান, তার নাতনিকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করা হয়। বিপ্লব ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। তার নাতনির ভবিষ্যতের কথা ভেবে কয়েকদিনের জন্য বাসা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের পেট্রলপাম্প এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিপ্লব দরবেশ প্রথম বিয়ে করার পর সন্তান না হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীরও কোনো সন্তান হয়নি। সন্তান না থাকায় স্ত্রীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।

চার মাস আগে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়া কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রথম স্ত্রী ভিডিও করেন। এলাকার অনেকের কাছে ওই ভিডিও ছড়িয়েও পড়েছে। বিষয়টি পুলিশও জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। বিপ্লব দরবেশ টাকা দিয়ে অনেকের মুখ বন্ধ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে বিপ্লব দরবেশকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি সংযোগটি কেটে ফোন বন্ধ করে দেন।

তবে বিপ্লবের প্রথম স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করেনি। এটা মিথ্যা কথা, আমিও কোনো ভিডিও করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

ঝালকাঠি থানা পুলিশের ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে আমি তদন্ত করার জন্য পুলিশ পাঠিয়েছি। কোনো পক্ষই পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। যদি কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর