ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনের ভিতরে ১৫০টি অবৈধ করাতকল

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ করাতকল (স মিল)। বন বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাঠ ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে পরিচালিত হচ্ছে এসব করাত কল ।

ফলে অবৈধ করাতকল মালিক, কাঠ ব্যবসায়ীরা ও কাঠ চোররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বন বিভাগসহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটি থাকলেও এ কমিটির কার্যক্রম চলছে শুধু কাগজে কলমে।

স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে ও স্থানীয়রা জানায়, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতায় রয়ছে বটতলী, ঝড়কা, চৌরাসা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী এই ৬টি বিট। এই রেঞ্জের আওতাধীন বন বিভাগের পরিমান ৮৮.৪৫ বর্গকলোমিটার। আর ৪৯টি মৌজায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২৯১০৬.৭৬ একর। ঘাটাইলের বিশাল বনভূমিতে রয়েছে শাল, সেগুন, গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামাজিক বনায়নের গাছ। বন আইনে সংরক্ষিত বন এলাকার ১০ কিঃমিঃ মধ্যে করাতকল স্থাপনের বিধি নিষেধ রয়েছে।

কিন্তু বিধি নিষেধ অমান্য করে সংরক্ষিত শাল গজারির বন ঘেঁষে, সামাজিক বনায়নের ভেতর, এমনকি বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের নিকটবর্তী স্থানে এসব অবৈধ করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব করাতকলে অবাধে চিড়ানো হচ্ছে শাল গজারিসহ সামাজিক বনের কাঠ। শুধুমাত্র স্থানীয় প্রশাসন ও বনকর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই চলছে এসব করাত কল। বছরের পর বছর এসব অবৈধ করাতকল পরিচালিত হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোন অভিযান না থাকায় সংরক্ষিত বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।

ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বন এলাকা ঘুরে দেখা জানা যায়, বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জের ৬টি বিটের আওতায় প্রায় ১০০টির বেশি অবৈধ করাতকল রয়েছে। তবে ঘাটাইল পৌরসভার করাতকল মালিক সমিতির দাবী অবৈধ করাতকলের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। সংরক্ষিত বন এলাকার ধলাপাড়া, সাগরদীঘি, দেওপাড়া, গারোবাজার, মাকরাই, ছনখোলা, বটতলা, নলমা, কুশারিয়া, পেচারআটা, মাইধারচালা, কাজলা, দেওজানা, চাপড়ি, মুন্সিগঞ্জ, মানিকপুর, বোয়ালীহাটবাড়ী, শহরগোপিনপুর, জোড়দিঘী, মুরাইদ, লক্ষিন্দর, সিংহেরচালা, শিবেরপাড়া, মালেঙ্গা, মোমিনপুর, বগা ও ফকিরচালা এলাকায় এসব অবৈধ করাতকল স্থাপন করা হয়েছে।

অবৈধ করাত কলের বিষয়ে পৌর করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আঃ হালিম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘাটাইল উপজেলায় দেড় শতাধিক করাতকল লাইসেন্স বিহীন চলছে। এ বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করছে না।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, বনের ভিতরে স্থাপিত এসব করাতকলের প্রায় অধিকাংশের মালিক কাঠ ব্যবসায়ীরা। আর কাঠ চোরদের সাথে করাতকল মালিকদের রয়েছে দহরম মহরম সর্ম্পক। সংঘবদ্ধ কাঠ চোরদেরও কারো কারো করাত কল রয়েছে আবার কেউ অংশীদার। করাতকল মালিক ও কাঠ চোররা মিলেমিশে সংরক্ষিত বনের গাছ নিধনের কাজে নিয়োজিত থাকলেও এ ব্যাপরে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই।

বনের ভিতর করাতকল বন্ধ করার বিষয়ে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু জানান, উপজেলা আইন শৃঙ্গলা কমিটি ও উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত আগষ্ট মাসের মাসিক সভায়ও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের উপস্থিতিতে অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি ম্যাজিস্টেট নিয়োগ দিয়ে কতৃপক্ষ অতিদ্রুত সংরক্ষিত বনে স্থাপিত করাতকল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

অবৈধ করাত কলের বিষয়ে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম হাবিবুল্লাহ জানান, ঘাটাইলের ধলাপাড়া রেজ্ঞের আওতায় ১০১টি করাতকল রয়েছে। এসব অবৈধ করাতকলের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রদান করা হয়েছে। তিনি টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে ম্যাজিষ্টেট নিয়োগ করে অবৈধ করাতকল গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মুহাম্মদ ইসলাম জানান, বনের ভিতরে স্থাপিত অবৈধ করাতকলগুলো বিরুদ্ধে শীগ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর