৩০ লাখ টাকায় সাতক্ষীরা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার হুমকি! অডিও ভাইরাল

টাকা নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ যখন গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে ঠিক তখন বিপরীত চিত্র সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগে। টাকা দিয়ে কমিটি ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ সাতক্ষীরা-৩ আসনের বর্তমান এমপি এবং সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হকের প্রেস সচিব ও পিএ তোষিক কাইফুর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কমিটি ভেঙ্গে দেয়া নিয়ে দেবহাটা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম সোহাগের সাথে তার কথোপকথন ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেখানে, ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। আর এ নিয়ে জেলার ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।

তোষিকে কাইফু সাবেক আশাশুনি শ্রীউলা ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমানে আশাশুনি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই অডিওতে তোষিকে কাইফু ও দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম সোহাগের কণ্ঠ বলে জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা।

পাঠকদের উদ্দেশ্যে সেই অডিওর কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো-

কাইফু: জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিককে বলো, আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করতে।

এইচ এম সোহাগ: ভাই, সাদিক ভাইয়ের জন্য কোন সেক্রিফাইস করা যায় না?

কাইফু: তাহলে সাদিক ভাই আজকেই ভেঙে দিক, আমি যদি কমিটি স্টে করতে না পারি তাহলে আমি আমার জন্ম ঠিক নাই। আজকে নজরুল সাহেব আসবে, বসবে। আজ জগন্নাথের সম্মেলন হতে পারে। ওরা ট্রমা সেন্টারে আসবে। তুমি যদি সেরকম বলো, আমি চাই আজকেই কমিটি ভাঙতে হবে। অনেক অপমানিত হয়েছি। (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ঢাকায় ট্রমা সেন্টারে বসবেন। তুমি বিশ্বাস না হলে স্যারের (রুহুল হক) কাছে শুনে দেখ। তোমার কাছে বলবে কিনা সেটা অন্য বিষয়। আর তোমার রবি (সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি) কাকাও কোন একটা শর্তে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সাদেকের পক্ষে কাজ করবে না। কোনো একটা কাজের জন্য। হতে পারে সেটা পিপি হতে পারে সেটা অন্য লীগ, যুবলীগ। কারণ পিপি না করলে রবি কাকার কোনো উপায় নাই। এটা তোমার বলার দরকার নাই…

আমার মনোনীত কমিটি না দিলে জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। আজ নজরুল সাহেব আসবেন তুমি যদি সাদেক ভাইকে সত্যি সত্যি চাও, তাহলে আমার সাদেক ভাইয়ের সাথে কোন রাগ নেই। কিন্তু আমার আশাশুনি ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙতে হবে। আর সুস্থভাবে তুমি মনে রাখ আর আজ সন্ধ্যার মধ্যে যদি ছাত্রলীগের কমিটি না ভাঙতে পারি তাহলে সন্ধ্যার মধ্যে আত্মহত্যা করবো। আমি ঢাকায় যাচ্ছি। আমার কাছে এখন ৩০ লক্ষ টাকা গচ্ছিত আছে। ৩০ লক্ষ টাকা। তোমরা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতেছো না কেন, বলো তো? শুধুমাত্র এই কাইফুর জন্য। তোমরা রুহুল হকের স্যারের পিএকে অপমান করবা, গুষ্টি মারবা, জামাত পুত্র বানাবা। আমরা শুনবো? তোমরা যদি স্যারকে এত ভালবাসো তাহলে কমিটি ভাঙছো না কেন?

এইচ এম সোহাগ: স্যার তো সদর কমিটি ভাঙতে বলেননি।

কাইফু: স্যার বলবে কেন, আমি বলা আর স্যার বলা এক না? স্যার বলবে কেন? স্যার কি সব বলবে? তোমাদের বুঝে নিতে হবে ভাই। আমি সাদিক ভাইয়ের বাসা পর্যন্ত গেছি ভাই। আশিককে আহ্বায়ক ও আসিক শাহবাজকে সদস্য সচিব করে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়ে গেছে ১৩ সেপ্টেম্বর।

এইচ এম সোহাগ: সাতক্ষীরা কি সম্মেলনের ডেট দিয়ে দেবে?

কাইফু: আমি তোমাকে বলি, ১৩ সেপ্টেম্বর, আশিক, মানে লাভলুর ভাই সভাপতি, ভাগ্নে, আশিক রুহুল হক সাহেবের লোক। সব লেখা শেষ। তুমি যদি একটা কাজ করতে পারো, সাদেক ভাইয়ের দিকে, তাহলে তুমি সদর কমিটি যদি ভেঙে দিতে পারো, আমি কথা দিচ্ছি ঐ কমিটির কিছু হবে না, নাহলে কালকে সন্ধ্যার সময় তুমি দেখতে পারবা। শোভন ভাইয়ের ছোট ভাই, ম্যানেজার আছে, আমার পাশে আছে। রাফির সাথে তুমি কথা বলো।

রাফি: হ্যালো স্লামালাইকুম।

এইচ এম সোহাগ: ভাই ভাল আছেন ভাই?

রাফি: হ্যাঁ ভাল আছি, কাইফু ভাই তো ব্যক্তিগত বিষয়গুলো শেয়ার করলো।

এইচ এম সোহাগ: ভাই, একটা ব্যাপার কি? আপনি তো জানেন, এখন ব্লকের রাজনীতি হয়। আমরা সেক্রেটারি ব্লকের রাজনীতি করি। কাইফু ভাইয়ের কথা সেক্রেটারি রাখার জন্য প্রস্তুত। কারণ জেলা সেক্রেটারি কাইফু ভাইকে অনেক ভালবাসে, স্নেহ করে। সেটা কাইফু ভাই ভাল করেই জানে। এখন ব্যাপার হচ্ছে, জেলা প্রেসিডেন্ট যদি না ভাঙতে না রাজি হয় তাহলে দায় ভার তো সেক্রেটারির না। আমরা সর্বদা রুহুল হক স্যারের রাজনীতি করি। রুহুল হক স্যারের যে লোক, সে আমাদের লোক হবে স্বাভাবিক।

রাফি: বুঝতে পারছি। এটা একটা প্রবলেম, এটা সমাধানে আসতে হবে। আজকে আমাদের ছাত্রলীগের সম্মেলন তো, জগন্নাথের সম্মেলন। আমরা এখন সম্মেলনে যাচ্ছি। ভাই ব্যস্ত থাকবে। আমরা সম্মেলনে যাচ্ছি। এটা ভাইটাল প্রবলেম হয়ে যায়। আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। শোভন ভাই আমার কাজিন, আপন চাচাতো ভাই। শোভন ভাইয়ের সাথে অনেক আগেই ভাইয়ের পরিচয়, শোভন ভাই তো একদিনে নেতা হয়নি। সেটা এক বিশাল ইতিহাস আছে। হুট করে নেতা হয়ে যাওয়া-বিষয়টি এ রকম…ভাইয়ের এই প্রবলেমটা দেখেন। আপনারা আছেন স্থানীয় পর্যায়ে। আমরা তো স্থানীয় পর্যায়ের সল্ভ করতে পারি না। ঢাকাতে থাকি, আপনাদের বিষয়টি আলাদা। বিষয়টি কীভাবে কি করা যায় আপনি যদি একটু দেখতেন।

অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর অনেকে প্রশ্ন করেছে- কে এই রাফি! এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদেক জানান, আমাদের কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য অনেকদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ষড়যন্ত্র করছেন। এটি তারই অংশ। তবে আমাদের সাংগঠনিক ভিত অনেক মজবুত কোনও ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না।

সুত্র: যমুনা টিভি

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর