সবুজ বাসের আত্মকাহিনী

স্বপ্ন সেটা তো সবাই দেখে।আমি মানুষের স্বপ্নকে বুনতে সাহায্য করি।বলা যায় আমি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।স্বপ্নকে ফেরি করে বেড়াই সকাল সন্ধ্যা।কত অজানা পথিক আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।কিন্তু সবাই আমার কাছ থেকে স্বপ্ন নিতে পারে না।কেবল উৎকৃষ্টরাই আমার কাছ থেকে স্বপ্ন নিতে পারে এবং তারাই আমার বুকে স্থান পায়। আমার বুকে যাদের আমি স্থান দেই তাদের সংখ্যা একটি মেলার মত হতে পারে বলা যায় মেধাবীদের মিলন মেলা।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে তাদের মেধাবী বলছি কেন?
মেধাবী বলছি কারণ,তারা দীর্ঘ সাধনা ও কঠোর পরিশ্রম করে উৎকৃষ্ট ফলাফল লাভ করে আমার বুকে স্থান করে নেয়।

আমি রাজপথে ছুটে চলি।আমার কোন ক্লান্তি নেই। এ পথে চলছি কয়েক বছর ধরে। আমি যখন রাজপথে ছুটে চলি, তখন শত অজানা পথিক আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মনে মনে তারা আমার বুকে স্থান পাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখে।এখন আপনি বলতে পারেন আমি কে.?এত মানুষ আমাকে নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখে.?

আমি আর কেউ না।আমি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেই সবুজ বাস।আমি অনেক শিক্ষার্থীর যাত্রাপথের আনন্দ-বেদনার সঙ্গী এবং সুখ দুঃখের সাথী। ভার্সিটির ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের ফেরার পথে আমি সরব হয়ে উঠি গল্প-কবিতা,আড্ডা আর কৌতুক।

মাঝে মাঝে আমি মুখর থাকি সুর-বেসুরা কন্ঠের গানে। এইসব সাথে নিয়ে আমার পথ চলা।মাঝে মাঝে আমি নিজেকে সেলিব্রেটি ভাবি।আমি অন্য সাধারন দশটা বাসের মতো না।কারণ আমার বুকে আরোহণ করে ভবিষ্যতের ব্যাংকার,আগমীর জাতি গড়ার কারিগর বা শিক্ষক, ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী,ভবিষ্যৎ সাংবাদিক, ভবিষ্যৎ আইনজীবী,ভবিষ্যৎ ঔষধ বিশেষজ্ঞ এবং আগামীর দেশ নির্মাতা। এতে আমার অহংকার নয় বরং এটা নিয়ে আমি গৌরববোধ করি।

আমার সবুজ বাসে এসি নেই।ভালো কোনো আসন নেই।তবুও আমার আসনের জন্য সবাই লড়াই করে এবং অনেক সময় দেখা যায় নির্ধারিত আসন এর অভাবে অনেক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুলে যায়। তারপরও সবাই আমাকে সবাই ভালবাসে। কারন আমি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেই। অন্যান্য বাস আমাকে ধাক্কা দিলে বা আঘাত করলে আমার যাত্রীরা তার প্রতিবাদ করে।

তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এসব যাত্রীরা আমার স্থায়ী যাত্রী নয়।তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৪-৫ আমার যাত্রী হয়ে থাকে।মাঝে মাঝে আমি নতুন যাত্রীদের স্বাগতম জানাই এবং পুরাতন যাত্রীদের বিদায় দিই।এই ভাবে আমার জীবন চলতে থাকে এবং এভাবে আমি ছুটে চলি পিচ ঢালা পথে ধরে মানারাতের সবুজ ক্যম্পাস থেকে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্য স্থালে।

লেখক: আসমাউল মুত্তাকিন, এম আই ইউ শিক্ষার্থী।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর