এসপি বললেন মাদক বেড়ে গেছে, ওসি বললেন খুঁজে পাচ্ছি না

স্থানীয়ভাবে মাদক সেবন ও কেনাবেচা বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক পিপিএম’র (সেবা) তোপের মুখে পড়েন সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। বুধবার সকালে সদর থানায় ওপেন হাউস ডে উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত আলোচনায় পুলিশ সুপারের তোপের মুখে পড়েন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান ইকবাল চৌধুরী, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম ও উপ-পরিদর্শক (এস আই) নুর আলম।

শেষে মাদকের বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে প্রতিটি থানায় প্রতি মাসে ‘জনতার পুলিশ আপনার থানা, আসতে যেতে নেইকো মানা’ এই স্লোগানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতন নাগরিকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ওপেন হাউস ডে সংশ্লিষ্ট থানা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়।

সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে সদর থানা প্রাঙ্গণে ওপেন হাউস ডে’র আয়োজন করে সদর থানা পুলিশ। অনুষ্ঠানে শুরুতেই প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক পিপিএম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ওপেন হাউস ডে আয়োজন করিই না।

যেখানে অধিকাংশরাই ওসি’র খাতিরের লোকজন থাকে। এখানেও তাই। তারপরেও যদি প্রকৃত মামলা না নেয়া বা অন্য কোনো কারো অভিযোগ, সমস্যা থাকে অনুরোধ রইল আপনারা বিষয়গুলো খুলে বলবেন।

এরপর আগত অতিথিদের বক্তব্য বাদ দিয়ে ফ্লোর উন্মুক্ত করে দিয়ে এসপি বলেন, অহেতুক সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমরা বক্তৃতা দিতে আসিনি, অভিযোগ শুনতে এসেছি। কারো কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে বলেন। হয়তো আপনারা যার বিরুদ্ধে বলবেন সেই সাব-ইন্সপেক্টর আপনাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন, তবুও আপনারা সাহস করে বলেন।

এরপর লালমনিরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র জাহেদুল ইসলাম ফ্লোর নিয়ে বলেন, দুই বছর ধরে মাদকের প্রবণতা কমে এলে বিগত দুই-এক মাস ধরে মাদকসেবীদের আনাগোনা আবার বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে সবাইকে নজর দেয়ার অনুরোধ করছি।

এরপর পুলিশ সুপার রশিদুল হক সদর থানার ওসি মাহফুজ আলমের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি প্রতিনিদিনই আপনাকে বলি সদর থানা নিয়ে কমপ্লেইন পাচ্ছি। এখানে মাদকের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে। আর আপনি প্রতিদিনই আমাকে বলেন যে, স্যার মাদক খুঁজেও পাচ্ছি না। এই যে পার্থক্য সে বিষয়ে আপনি এখন কী বলবেন ?

উত্তরে ওসি মাহফুজ আলম বলেন, স্যার মাঝখানে আপনি বলার পরেও অনেকে আমাকে কমপ্লেইন করেছে বিভিন্ন জায়গায় মাদকসেবীরা আনাগোনা করছে। যারা ব্যবসা করে তাদের আমরা ধরছি। এ সময় এসপি ওসিকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, মাদক যে কমে গেছে সেটা বোঝা যায় এটা দেখে যে, এখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা এতটাই সাহস পেয়েছে যে, চায়ের দোকানে মাদক কেনাবেচা শুরু করেছে।

এটাতো আপনার ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি। যদিও অপনারাই সেই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন। যদি মাদক ব্যবসায়ীরা এত সাহস পেলো তাহলে থানায় ওসি থাকার দরকার কী? মোটকথা আমি এসপি হিসেবে জানি আপনার থানা এলাকায় মাদক বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপনি শক্ত ব্যবস্থা নেবেন। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরপর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশেদুল ইসলাম বলেন, দূরদুরান্তের এমন কি শহরের মাদকসেবীরাও আমার এলাকায় আসে। আমি আজ জানলাম এসআই নুর আলম আমার এলাকার দায়িত্বে আছেন। এসপি রশিদুল হক এ সময় এসআই নুর আলমকে ভর্ৎসনা করে বলেন, আপনি কেমন অফিসার যে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি আপনাকে চেনে না।

এরপর আবার ফ্লোর উন্মুক্ত করে দেয়া হলে স্থানীয় এক বস্তিবাসী নারী বলেন, আমাদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ধ্যার পর থেকে রেলওয়ে ড্রাইভার পাড়া এলাকায় কিছু কিছু মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কারণে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।

মাদকে ছেয়ে গেছে দাবি করে ওই নারী বলেন, অতীতে এ প্রবণতা কম ছিল। এরপর আবার ওসিকে এসপি জিজ্ঞেস করেন, ড্রাইভার পাড়া এলাকার দায়িত্বে কোন এসআই আছেন। কিন্তু ওসি তা বলতে না পারায় আবারও তাকে ভর্ৎসনা করেন এসপি।

এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের উদ্দেশ্যে বলেন, একমাস ধরে আপনাদেরকে বলছি আপনার থানায় মাদক বেড়েছে। কিন্তু অপনারা বলছেন আমরা মাদক খুঁজে পাচ্ছি না। এ সময় তদন্ত ওসির উদ্দেশ্যে এসপি বলেন, আপনি সারাদিন করেনটা কি? আগের তদন্ত অফিসার তো সন্ধ্যার পরেই অফিসারদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন। আপনার তো আওয়াজও দেখি না।

অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সিরাজুল হক, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ আব্দুল হমিদ বাবুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর