আমি তার ছিঁড়া খেলোয়াড় : শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আলোচিত সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগকে নিয়ে খেইলেন না। তাহলে তা হবে আগুন নিয়ে খেলা। জিয়া পারে নাই, এরশাদ পারে নাই, খালেদা জিয়াও আওয়ামী লীগকে নিয়ে খেইলা পারে নাই। তবে শামীম ওসমান এমন কোনো কাজ করবে না যাতে, সরকার, প্রশাসন ও দলের বদনাম হয়।

তিনি আরো বলেন, কাকে খেলা শেখান? আমারে খেলা শেখান! বড় খেলোয়াড় হতে পারিনি, তবে আমি কিন্ত তার ছিঁড়া খেলোয়াড়। ওই সময় তিনি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এই মুহূর্তে যদি একটি হুকুম দেই তাহলে কী নারায়ণগঞ্জ বন্ধ হয়ে যাবে? ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কী বন্ধ হবে? উপস্থিত নেতা কর্মীরা ওই সময় তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে শ্লোগান দিয়ে উঠেন।

তখন তিনি বলেন, আমাদের কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। আমরা চাই শুধু জনগণের জন্য কাজ করতে। নেত্রীর কাছে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমার এটাই চাওয়া।আজ শনিবার বিকেলে নগরের মিশনপাড়া এলাকায় ‘রুখে দাঁড়াও স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে’- শ্লোগানে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। দুপুরে আয়োজিত সমাবেশটি বিকেল নাগাদ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

নগরের মিশনপাড়া থেকে সমাবেশটি নগরের তোলারাম কলেজ মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর থেকে বিভিন্ন উপজেলা, থানা ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সমাবেশ মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় মিছিল নিয়ে আর এগুবেন না। মিছিল যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে যান। মঞ্চের আশপাশে তিলধারণের জায়গা নেই। মিছিলের নেতাকর্মীরাও সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে যায়।

গত কয়েকদিন থেকেই শামীম ওসমানের সমাবেশটি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বেশ আলোচনা হচ্ছিল। কেন, কী কারণে এই সমাবেশ-এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল সাধারণ নগরবাসীর মধ্যে। নগরবাসীর অনেকে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ফোন করেও জানতে চেয়েছিলেন এই সমাবেশ সম্পর্কে। তবে সমাবেশ নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরাও ছিল অনুসন্ধিৎসু।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বাবু চন্দন শীলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুব লীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, সাফায়েত আলম সানি প্রমুখ।

শামীম ওসমান তার বক্তব্যে আরো বলেন, বাংলাদেশের একটি পক্ষ রয়েছে যারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে কাজ করেন। ওই পক্ষটি গত কোরবানির ঈদের আগে দেশে তাদের দোসরদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশ ১০০ বছর পিছিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা না থাকলে দেশ আর এগুতে পারতো না। ২১ আগস্টের হামলায় নেত্রী মারা গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। অথচ নেত্রী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও মানবতা বিরোধীদের বিচার করেছেন।

শামীম ওসমান বলেন, ‘বাবা মায়ের পর যদি কাউকে মানি কারো জন্য জীবন দিতে পারি তাহলে তিনি হলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭৫-এর পর যারা রাজনীতিতে এসেছি আমরা শেখ হাসিনাকে স্বপ্নের মা রাজনৈতিক মা মনে করি।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। একটি পক্ষ সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতির কাছে এক নারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে। কারা সেই নারীকে পাঠাইছে? ড. কামাল হোসেন আর মির্জা ফখরুলরা বিদেশিদের নিয়ে বৈঠক করেন। দেশের মালিক কারা? বিদেশিদের সঙ্গে মিটিং করে কী হবে?দেশের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বুকের তাজা রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি দেশের মালিক তো তারাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, নেত্রী বলেছেন দেশকে নিয়ে দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তখনই আমরা মনে করেছি নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জবাসীকে অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রস্তুত হতে হবে। নেত্রী ডাক দিলেই আমাদের অপশক্তির বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী কোনো শক্তি যাতে প্রশাসনের কোনো স্তরেই অবস্থান নিতে না পারে সেজন্য তিনি প্রশাসনকে খেয়াল রাখার আহবান জানান।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক বাকপ্রতিবন্ধীকে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার মামলায় ওই থানার ৪৭৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাহলে কি একটি পক্ষ চায় সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে যাক। ঘটনা ঘটেছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে আর আসামি করা হয়েছে ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও ব্যবসায়ীরা। মামলার ৭০ ভাগ হলো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আর ৩০ ভাগ স্থানীয় নেতা-কর্মী। ওই মামলার বাদি সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেন মৃধা ঢাকায় বদলী হয়ে জিডি করে জানিয়েছেন মামলায় তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং পুলিশ সুপার তাকে কথা দিয়েছেন যে ওই মামলায় নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। আর এ মিথ্যা মামলা নেপথ্যে যারা তাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।

নাসিক মেয়র আইভীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে কেউ কেউ নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য ভ্যাঁ ভ্যাঁ করেন। কিন্তু নৌকা নিয়ে নির্বাচনে জয় লাভের পর আবার সেই বলেন, আমি কোনো দলের নই। তাহলে আগামীতে আর নৌকা চাইয়েন না। সেই তিনিই এখন ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে তাদের মুখের ভাত কেঁড়ে নিতে চাইছেন। ফুটপাত থেকে উঠিয়ে দিলে তারা কি ইয়াবা বিক্রি করে পেট চালাবে-প্রশ্ন রেখে শামীম ওসমান বলেন, পারলে আগে তাদের বিকল্প রুজির ব্যবস্থা করেন।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর