দেরিতে স্কুলে ফেরায় ছাত্রীকে ছাড়পত্র দিলো স্কুল কর্তৃপক্ষ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ময়না আক্তারকে অবশেষে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ছাড়পত্র দেওয়া হয়। জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রানা কুমার সরকার স্বাক্ষরিত ছাড়পত্রে উল্লেখ করা হয়, ময়না আক্তার ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। গত বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার কাছ থেকে বিদ্যালয়ের সব পাওনা বুঝে নেওয়া হয়েছে। অভিভাবকের ইচ্ছাতেই সে ছাড়পত্র নিয়েছে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্কুলের টিফিনের সময় ময়না আক্তার বাইরে যায়। টিফিন শেষে দেরিতে ক্লাসে ফেরে। এ সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরদিন বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে জামালগঞ্জ বাজারের জেডিসি মোড়ে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

ছাড়পত্র পাওয়ার পর শিক্ষার্থী ময়না আক্তার বলে, ‘গত বুধবার দুপুরে টিফিন খেয়ে স্কুলে ফিরতে কিছুটা দেরি হয়। এ কারণেই আমাকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেওয়া হলো। আমাকে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে কথাগুলো রটিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’

ময়নার বাবা উপজেলার রুকিন্দীপুর গ্রামের মুকুল হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা একটি কারণ দেখিয়ে আমার মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক। টিফিনের পর স্কুলে ফিরতে একটু দেরি হওয়াতেই আমার মেয়ের এত বড় শাস্তি দেওয়া হলো। এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ভুক্তভোগী ময়নার মা সুলতানা পারভীন বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ টিসির কাগজ হাতে দেওয়ার আগে আমার কাছ থেকে আরেকটি কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। সেখানে কী লেখা আছে তা আমাকে পড়তে দেওয়া হয়নি। এরপর তারা টিসির কাগজটি হাতে দিয়ে স্কুল থেকে চলে যেতে বলেন। মেয়েটিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ টিসি দিয়ে বের করে দিলো।’

টিসি দেয়ার বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রানা কুমার সরকার বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী বুধবার দুপুর ১টার দিকে কাউকে না জানিয়ে স্কুল থেকে চলে যায়। ৩টা ২০মিনিটে স্থানীয় রকি নামে এক ছেলে তাকে স্কুলে দিয়ে যায়। এ ঘটনায় স্কুলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মেয়েটিকে ছাড়পত্র (টিসি) দেওয়ার বিষয়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং তা রেজুলেশন হওয়ার পরে মেয়েটির মায়ের হাতে দেওয়া হয়েছে। এটি দিয়ে সে যেকোনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে তো আমি কিছু করতে পারবো না।’

রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আহসান কবির বলেন, ‘ব্যক্তি আক্রোশে স্কুলের সভাপতি গোলাম মাহফুজ চৌধুরী মেয়েটিকে টিসি দিয়ে বের করে দিয়েছেন।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন, ‘মেয়েটির মা নিজে স্কুলে এসে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য আবেদন দিয়েছেন। এরপর তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি তদন্তের জন্য ওই স্কুলে গিয়েছিলাম। তদন্ত চলমান থাকায় এ বিষয়ে এখন কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’

এদিকে, ওই ছাত্রীকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর গত বৃহস্পতিবার স্কুলের একজন অফিস সহকারীর ওপর হামলার অভিযোগ করেন সভাপতি গোলাম মাহফুজ চৌধুরী। এ ঘটনায় ওই দিনই বাদী হয়ে ছাত্রীর পক্ষের ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি । এসব নিয়ে জামালগঞ্জ বাজার এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর