জরাজীর্ন ফাটল বিদ্যালয়ের উপর কোটি টাকার ভবন নির্মান

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের নাগমুদ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদে কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে সম্প্রসারনের কাজ চলায় এলাকাবাসীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ স্থানীয় লোকজন বর্তমান ঝরাজীর্ণ ভবন ধ্বসের আশঙ্কায় হতাশা প্রকাশ করেন।

আবদুস সালাম, রঈছ উদ্দিনসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের বর্তমান ভবনটির বীমগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। দেয়ালগুলো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, দেয়ালের নীছের অংশে ভাঙ্গন দেখা দিলেও ঝুকিপূর্ণ এ ভবনের ছাদে আরো একতলার কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

বার বার স্থানীয় লোকজনসহ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে বলার পরও তারা সম্প্রসারন কাজ অব্যাহত রেখেছে। অভিভাবকগণ আরো জানান, স্কুলের উত্তরপাশে একটি টিনশেড শ্রেণীকক্ষ ও প্রচুর পরিমান জায়গা থাকার পরও বিপদজ্জনক এ ভবনের উপরে সম্প্রসারনের কাজ কেন করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তবে এ ব্যপারে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নাগমুদ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গেলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের রামগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথমে কোন কথা না বললেও পরে সাংবাদিকদের জানান, সোমবার স্যার (নির্বাহী প্রকৌশলী) আসবেন, আপনারা সেদিন আসেন।

স্যার আসার পর কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে। ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান স্কুলের কাজের ব্যপারে উল্টোপাল্টা পোষ্ট করা হচ্ছে। কাজ বন্ধ করে দিলে আমাদের কোন ক্ষতি হবে না, এ এলাকার ছেলেমেয়েদের ক্ষতি হবে।

এসময় তিনি বার বার চেয়ার থেকে উঠে চলে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে মোবাইলে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮/২০১৯ইং অর্থ বছরে উক্ত বিদ্যালয়ের পুরাতন এ ভবনের ছাদে হরিজেন্টাল ও ভার্টিক্যাল প্রক্রিয়ায় এক্সটেনশনসহ ৫টি রুম ও একটি টয়লেট নির্মানের জন্য ১ কোটি ৬লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।

কাজ পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিসান এন্টারপ্রাইজ ১৯৯৮/৯৯ইং অর্থ বছরে নির্মিত ২১ বছরের পুরাতন ভবনের ছাদে গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে সম্প্রসারনের কাজ শুরু করেন। কাজ শুরু করতে গিয়ে এসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিসান এন্টারপ্রাইজ স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে পড়েন। এসময় স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির হুমকিতে আন্দোলন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন লোকজন।

এ ব্যপারে জিসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধীকারী আলতাফ হোসেন আমার লক্ষ্মীপুর ডট কম কে জানান, টেন্ডার অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে যেভাবে আমাদের বলা হয়েছে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবেন এ ভবনের ছাদে নতুন আরেকতলা (সম্প্রসারন) করার যাবে কি না।

পুরাতন টিনশেড ভবনের স্থানে এ সম্প্রসারন কাজ করা সম্ভব নয়। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী দিপঙ্কর খীসা জানান, সম্প্রতি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর চাকুরীর মেয়াদ কাল পূর্ণ হওয়ায় আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি লক্ষ্মীপুরে। তারপরও আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আপনাকে জানাবো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ এফ এম আবদুস ছালাম বিদ্যালয়ের কাজ কে পেয়েছে বা কত টাকা বরাদ্ধ হয়েছে এ ব্যপারে কিছুই জানেন না বলে জানান, আমি শিক্ষক মানুষ এ ব্যপারে কোন তথ্য আপনাকে দিতে পারছি না।

স্থানীয় ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বশির আহম্মেদ মানিক জানান, আমি শুনেছি বিষয়টি। উপজেলা নির্বাহী স্যারের সাথে কথা বলেছি এ ব্যপারে। তবে তিনি ঝরাজীর্ণ ভবনে কিভাবে সম্প্রসারনের কাজ চলছে সে বিষয়ে তিনি জানান, আমি মাত্র তিনমাস অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে আগের কমিটির সভাপতির সময়ে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, আমি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। খোজ নিচ্ছি, যদি এমনটাই হয় তাহলে আগে থেকে সাবধান না হলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি আগামীকাল (রবিবার) জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর