কার মাথায় বালিশ আর পর্দার আড়ালে কে?

সম্প্রতি দুটি দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এর একটি হলো বালিশ ও অন্যটি পর্দা। এ নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন। পাঠকদের জন্য তার নিন্ধের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

‘আমরা রাজনীতিকদের গালাগাল করি অথচ সারাক্ষণ তাদের নিকটে যাওয়ার ফিকির করি। বংশে কোনো এমপি, মন্ত্রী থাকলে তিন-চার পুরুষ ধরে তার রেফারেন্স দেই।আমরা সরকারের সব কিছু খারাপ দেখি বা খারাপ জানি। যেমন পুলিশ খারাপ, প্রশাসন খারাপ, সরকারি ডাক্তার খারাপ, শুধু সরকারি চাকরি ভালো। একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য আমাদের তরুণেরা রাজপথে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকে।’

এরপরই তিনি বালিশ দুর্নীতির প্রসঙ্গটি টেনে এনে এনে বলেন, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় এ ধরনের অভিযোগে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। আমার কাছে কিন্তু মনে হয়, এরকমই তো হওয়ার কথা, এমনই তো হয়ে আসছে। একজন রাজনীতিবিদের কাছে গিয়ে যখন মেয়ের বিয়ে বা ছেলের পরীক্ষার খবর দেই, চেয়ারম্যান বা এমপি সাহেব যখন নিতান্ত অবহেলায় দুই বা পাঁচ হাজার টাকা গুঁজে দেন আমাদের হাতে বা ট্যাকে, তখন কি আমরা জানতে চাই অনেককে দান বা খয়রাত করার টাকা তিনি কোথায় পান?’

‘লাখ টাকার কম বেতন পাওয়া আমাদের খালাতো ভাই যখন কোটি টাকা খরচ করে আমাদের দাওয়াত দেন বা ১০/১৫ লাখের উপহার দেন বা সাহায্য করেন, তখন কি আমরা জানতে চাই, এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন?’

‘…যখন আমরা ভাগ পাই বা ভাগ পাওয়ার আশায় থাকি, তখন আমরা চুপ থাকি আর যখন আমাদের কোনো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তখন আমরা হইচই করি, করি তীব্র প্রতিবাদ? আমরা কি নিজেদের স্বার্থেই এরকম অন্ধ হয়ে থাকব? নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য বা নিজে বড় হওয়ার জন্য আমরা অন্য মানুষকে, নিজের দেশকে ঠকাব? ঠকাতে পারি৷ কিন্তু মনে রাখবেন, ঠকানো একটা অভ্যাসের মতো। অপরিচিত, অনাত্মীয় থেকে আপনি বন্ধু, আত্মীয়, ভাই-বোন, মা-বাবা, স্ত্রী-স্বামী, ছেলে-মেয়ে, এমনকী নিজেকেও ঠকাতে শুরু করবেন।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ফরিদপুরের এক হাসপাতালের জন্য কেনা পর্দা দুর্নীতির ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির অব্যবহৃত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) জন্য একটি পর্দা কেনা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে। বর্তমানে যার বাজার মূল্য হবে ২০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মিত গ্রিন সিটিতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে লাগামছাড়া দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয় গত মে মাসে। সেখানেএকটি বালিশের দাম ধরা হয়েছিলো ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর