বনানীতে ভয়াবহ আগুনের রহস্য উদঘাটন

গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২৩তলা সুউচ্চ ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিক ২৫ জনের প্রাণহানি হয়। এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অর্ধশতাধিক।

ভয়াবহ এই আগুনের সূত্রপাত ভবনটির ৮ম তলায় বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে বনানীর এফআর টাওয়ারের পাশে গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব ফায়জুর রহমান।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গণশুনানির মূল উদ্দেশ্য হলো আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে যাতে আমরা উত্তরণ করতে পারি। গত ২৯ মার্চ থেকে আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গণশুনানি তদন্ত কাজেরই একটি অংশ। আমরা জমির মালিক পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দিয়েছে। পাশাপাশি এই ভবনটি যারা নির্মাণের কাজ করেছে তারা গতকাল পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র দেয়নি। তাদের কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য সময় দিয়েছি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়জুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের বহুতল ভবনে যেসব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার দরকার, তা ছিল না। আগুন লাগার সময় ভবনে কোনো ফায়ার অ্যালার্ম বাজেনি। কখনও কোনো অগ্নি সুরক্ষার মহড়া হয়নি। ভবনের ফায়ার এক্সিট ওয়ে খুবই সরু, অনেকগুলো ফ্লোরে এক্সিট ডোর সিল করা ছিলো। এক্সিট ডোরের কোনো দিকনির্দেশক চিহ্ন ছিল না। এ কারণে আগুনের ঘটনায় ভবনে অবস্থান করা কেউ ওই ডোরটি ব্যবহার করতে পারেনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট। তখন ভবনের মালিকানা ছিল অর্ধেক-অর্ধেক। ২০০৭ সালে জমির মালিক এস এম এইচ ফারুক ভবনটি বুঝে পান। এফ আর টাওয়ারের চতুর্থ তলা থেকে ওপরের দিকে ২৩ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে চারটি করে ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে জায়গার পরিমাণ ১৫০০ স্কয়ার ফুট।

ডেভেলপার কোম্পানি রূপায়ন ওই ভবনে তাদের অংশ বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই হিসাবে বর্তমানে ভবনটির মালিক মোট ২৪ জন। মালিকরা আবার কেউ কেউ তাদের ফ্লোরগুলো ভাড়া দিয়েছেন। বর্তমানে ভবনটিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কাশেম ড্রাইসেল নামে একটি কোম্পানি তিনটি ফ্লোরের মালিক, ‘আমরা টেকনোলজিস’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের আছে চারটি ফ্লোর, ডার্ড গ্রুপের রয়েছে পাঁচটি ফ্লোর।

জমির মূল মালিক ফারুকের ম্যানেজার কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমানে ভবনটির মালিক ২৪ জন, আর প্রতিষ্ঠান আছে ২৯টির মতো। এর মধ্যে একজন মালিক হলেন সানলাইট ব্যাটারির প্রস্তুতকারক কাশেম ড্রাইসেল লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাসভিরুল ইসলাম। তার ফ্লোরগুলো হরো ২০, ২১ ও ২২ তলা। এছাড়া, আরও মালিক যারা আছেন— তাদের কারও কারও নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে, আবার কেউ কেউ ভাড়া দিয়েছেন।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর