সিরাজদিখানে আলু চাষিদের শেষ সময়ের ব্যস্ততা

দেশে গোল আলু উতপাদনের অন্যতম বৃহত এলাকা মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোতে এখন গোল আলু উত্তোলনের শেষ সময়ের ব্যস্ততা কৃষকদের।উপজেলার প্রধান অর্থকারি ফসল আলু নিয়ে কৃষকের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই।। কৃষক পরিবারের সদস্যবৃন্দ, লেবার, আলু পরিবহনের শ্রমিক, কোল্ডস্টোরেজের কর্মকর্তা কর্মচারী, ছালা ব্যবসায়ীসহ আলুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেরই এখন মহা ব্যস্ততায় দিন অতিবাহিত করছে । আলু ভিত্তিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে অবিরাম। তবে এবার বাম্পার ফলন হওয়া সত্যেও দাম কম ও আলুর আকৃতি ছোট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ফলনের তুলনায় আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন অধিকাংশ কৃষক।

এছাড়াও এবছর বেশি সময় ধরে অবিরাম বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় পচন ধরার শঙ্কার মধ্যে দিয়ে সিরাজদিখান উপজেলার কৃষকরা আলু উত্তোলন শুরু করেছেন বলে জানান কৃষক নূর ইসলাম। উপজেলার বিস্তৃর্ণ জমিতে এখন আলু উত্তোলন আর জমিতে আলু মজুদ করার চিত্রই দেখা যায়।এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু কৃষি শ্রমিক ও পরিবহন সংকটের কারণে বিগত তিন বছরের মতো এবছরও কৃষক আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট চাষিরা আলু উত্তোলনের পর জমিতে ফেলে রেখেছেন ক্রেতার অভাবে। কারণ কোল্ড-স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করতে গেলে শ্রমিকের মজুরি, পরিবহন খরচ, ছালা-সুতা ক্রয়সহ কোল্ড-স্টোরেজের ভাড়া গুণতে হয়। অপরদিকে অনেক বড় কৃষক গত কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই পরিবহন ব্যয়সহ বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে কোল্ড-স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করছেন।

তবে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এলাকায় শ্রমিক ও পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট সমাধানে এবারও দেশের উত্তরবঙ্গ রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, জামালপুর থেকে কৃষি শ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিক এসেছেন। গত কয়েক বছর যাবত নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ও কচুরিপানার কারণে নৌকায় আলু পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। আবার রাস্তার অভাবে ট্রাক ও ট্রলির মাধ্যমেও সব এলাকার আলু পরিবহন করা যাচ্ছে না।বিশেষ করে লতব্দী ও বালুচর ইউনিয়নের খাসকান্দি চান্দের চরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলোর আবাদ হয় প্রতিবছর কিন্ত ভালো কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে আলু উত্তোলনের প্রথমাবস্থায়ই পরিবহন খাতে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। তাই ঐসব এলাকার আলু পরিবহন করে কোল্ড-স্টোরেজে নেওয়া হয় বড় কষ্ট করে কিছু পথ শ্রমিকের মাথায় করে কিছু পথ ট্রলিতে করে আবার কিছু পথ নদী পথে।তবে কিছু এলাকার আলু পরিবহন করে কোল্ড-স্টোরেজে নেওয়া হয় সাইকেলের মাধ্যমে। উত্তরবঙ্গের শ্রমিকেরা সাইকেল নিয়ে আসে। প্রতি সাইকেলে ৫ থেকে ৬ মণ আলু পরিবহন করতে পারেন তারা। দূরত্বভেদে বিভিন্ন রকম মজুরি নেওয়া হয়।

সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় জানান, এ বছর সিরাজদিখান উপজেলায় ৯ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গোল আলুর ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলুর ব্যবহার বৃদ্ধি ও বিদেশে রপ্তানি করা না গেলে আলুর এ দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর