ফুটপাতেও নিরাপত্তা পাননি বাস চাপায় প্রাণ হারানো ফারহা

জীবন নিয়ে হয়তো বিস্তর পরিকল্পনা ছিলো ফারহার। ভালোই কাটছিলো সময়। রোজকার মতো বৃহস্পতিবারও তিনি বেরিয়েছিলেন তার স্বামীর সাথে। কিন্তু প্রতিদিনের মতো আজ আর ঘরে ফেরা হয়নি ফারহার।

ফুটপাতেও নিরাপত্তা পাননি বাস চাপায় প্রাণ হারানো ফারহা নাজ। রাজধনীর মহাখালীতে এক দ্রুত গতির বাস চাপায় তার মৃত্যু হয়েছে। স্বামী নাজমুল হাসানের মোটরসাইকেলে চড়ে সকাল নয়টার দিকে মহাখালী আসেন ফারহা।

বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি-আমতলীর মাঝামাঝি মহাখালী উড়াল সড়কের পাশে রাস্তা পার হয়ে ফুটপাতে উঠছিলেন তিনি। ঠিক তখনই দ্রুতগতিতে আসা ক্যান্টনমেন্ট মিনিবাস সার্ভিসের বেপরোয়া গতির একটি বাস ধাক্কা দেয়া ফারহাকে। বাসটি ফারহাকে ধাক্কা দেয়ার আগে ধাক্কা দেয় আরো এক যুবককে।

যিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারপর ধাক্কা দেয় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। এরপর এসে ধাক্কা মারে ফারহাকে। বাসের ধাক্কায় ফারহার মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু তখন আর দেহে প্রাণ ছিল না ফারহার। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাখালী থেকে বাসটি ইউ টার্ন নিয়ে কাকলীর দিকে যাচ্ছিল। ফাঁকা রাস্তায় সেই বাস খুব দ্রুতগতিতে চলছিলো। সেই গতিতেই বাসটি একটি ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা দেয়। এ সময় পাশে থাকা একটি ছেলে ছিটকে পড়ে যান। এরপর ফুটপাত ঘেঁষে বাসটি আরো ২০-৩০ ফুট সামনে এগিয়ে যায়। প্রথম থেকেই পুরো ঘটনা দেখেছিলেন মহাখালীর একটি শোরুমের নিরাপত্তা প্রহরী মোটর ফুল মাহমুদ।

ফুল মাহমুদ বলেন, বাসটি আমার সামনে দিয়ে আরেকটি খাম্বায় (সড়ক বাতির খুঁটি) ধাক্কা দিয়ে বেঁকে দেয়। খাম্বার পাশে রাস্তায় ছিলেন একজন নারী। বাসের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছিলো। আমরা দু’জনকে ধরাধরি পাশে নিয়ে আসি। পরে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নাজের বড় বোন জিনাত রাজ জানান, তার বোন পরিবার নিয়ে মিরপুরের মনিপুরে থাকতেন। তার স্বামী নাজমুল হাসান পল্লী বিদ্যুতে চাকরি করেন। ফারহা নাজ বনানী এলাকায় ইউপিএল নামের একটি কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন।

তাহারিন হাসান ইসরা নামে তার ১৩ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। আজ সকালে স্বামী নাজমুল হাসান তাকে মোটরসাইকেলে করে মহাখালী আমতলীর তার অফিসের বিপরীত পাশে ব্রিজের কাছে নামিয়ে দেন। সেখানে রাস্তা পার হয়ে অফিসে যাওয়ার সময় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। ফারহার স্বামীর গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই থানার বাথুলী গ্রামে।

এদিকে, ওই ঘটনার পর বাসটির চালক ঘটনাস্থল থেকেই পালিয়ে গেছেন। বাসচালকের সহকারীও পলাতক। ঘটনাস্থল থেকে বাসটিকে আটক করে বনানী পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে।

বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন বলেন, দ্রুতগতিতে ফুটপাতে ধাক্কা দেয়ায় বাসটির সামনের বাম পাশের নিচের অংশ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ফারহার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে ।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর