বাকৃবি ক্যাম্পাসের অসঙ্গতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মানে নিজের রাজত্ব। ক্যাম্পাসে আসলে প্রতিটি শিক্ষার্থীরই মনে এক আলাদা শক্তি কাজ করে। মনে হয় নিজের বাড়িতে এসেছি নিজের পরিবারের সাথে আছি। বন্ধু শিক্ষক, কর্মচারী নিয়ে এ এক অন্যরকম পারিবারিক বন্ধন। প্রতিটি পরিবারেই কিছু সমস্যা থাকে ঠিক একইভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গুলোতেও বিভিন্ন সমস্যা থাকে।

আমরা যেমন পরিবারের কোনো সমস্যা হলে সবাই নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে পারিবারিক সমস্যা সমাধান করি তেমনি ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলোও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তার উচিৎ নিস্বার্থ ভাবে ক্যাম্পাসের উন্নয়নের কাজ করা। পড়াশোনার জন্য সুষ্টু পরিবেশ গড়ে দেওয়া। তাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের নিকট আমাদের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরছি।

বাকৃবির বিভিন্ন সমস্যার কথা আলোচনা করে কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ আফ্রিদি বলেন, ক্যাম্পাস যেখানে “আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা”। দেয়ালবিহীন, খোলামেলা, মায়াময়ী এই ক্যাম্পাসে প্রতিটি বাকৃবিয়ানের স্বপ্ন পূরন হোক। কথায় আছে, চোখের সাথে মনের মিল না থাকলে জ্ঞানী হওয়া যায় না।

২০১৯ এ এসেও শিক্ষার্থী-বান্ধব পড়াশুনা এখন সময়ের দাবী। ছোটবেলায় পড়তে বসলে “মা” টিভির শব্দ না কমিয়ে বিদ্যুতের সংযোগটাই বন্ধ করে দিতো, যাতে তার ছেলে মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারে। আমি আফ্রিদী একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, হলে ও ক্লাসরুমে পড়াশুনার জন্য ভালো পরিবেশ চাই যাতে জনগনের টাকায় গ্রাজুয়েশন শেষ করে একজন প্রকৃত জ্ঞানী, রুচিশীল, স্বনির্ভর মানুষ হয়ে ঋনী থাকা, ঐ সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে পারি।

পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থের প্রতি নজর দেওয়াটাও খুবই জরুরি, প্রায়শই খাবারের গুনগত মান ও পরিবেশ নিয়ে নেগেটিভ মতামত শুনা যায়। স্যার (প্রশাসন) আপনারা বাসায় ফিরে আপনাদের সন্তানদের সাথে ভালো খাবার খেয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়েন, আমাদেরকেও আপনাদের সন্তান ভেবে হোটেলগুলোর উপর নজরদারি বাড়ান।

আমরা সবাই জানি আমাদের ভার্সিটিতে একটা বড় মাপের জিমনেসিয়াম আছে, কিন্তু অনেকেই হয়তো জানি না যে সেখানে কি ধরনের যন্ত্রপাতি আছে এবং সেগুলোর এখনকার অবস্থা কেমন। কিন্তু এটাই সত্যি যে, যন্ত্রপাতির বেশিরভাগই সেকেলে আমলের এবং কিছু আধুনিক যন্ত্র থকলেও সেগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

আমাদের মাননীয় ভাইসচ্যান্সেলর (ড. লুৎফুল হাসান) মহোদয়, “স্টুডেন্টের জন্য ইউনিভার্সিটি” এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশাবাদী তিনি অতিশীগ্রই আমাদের এই সমস্যাসমূহের কার্যকরী সমাধান দিবেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামটা শুনলেই যেন অপরুপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর এক বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবি মনের কোনে উঁকি দেয়। মনে হয় যেন জীবনের সকল স্বাদ আস্বাদন হয়েছে বিশ^বিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়ে। সেখানে চলছে মাননীয় উপাচার্যের প্রচষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য সহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ঢেউ।

যেমন কিছুদিন আগেই কৃষি অনুষদের সামনের রাস্তাটিতে ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে আলোকিত করা হলো। কিন্তু ১২৫০ একরের ক্যাম্পাসের অধিকাংশ রাস্তায় রাতের আঁধারে আলোর ছোঁয়া পায়নি এখনও । বিশেষ করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট যওয়ার মূল রাস্তা সহ, পোল্ট্রি ফার্মের রাস্তা এবং জব্বারের মোড় থেকে ফসিলের রাস্তার বেহাল অবস্থা। রাতের বেলা এইসব রাস্তাদিয়ে যাতায়তে বেগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। আবার এরই মধ্য বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত মোটরসাইকেল চালানো এখন নিত্য দিনের দুর্ঘটনার সাক্ষী। সেটা দূরীকরণে কয়েকদিন আগে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হলেও অবস্থার বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি। বাকৃবি প্রশাসনের কাছে এ বিষয় গুলোতে উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করে ছাত্রদের কল্যানে এগিয়ে আসবে আশা করেন কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মনোয়ার হোসেন।

আরও কিছু সমস্যার কথা কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলিফ মো. শাহরিয়ার জানান, দেশে কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের কৃষি খাতে অসামান্য অবদান রেখে আসছে। কিন্তু এই বিশ^বিদ্যালয় থেকে যারা পড়াশোনা করে উচ্চডিগ্রি নিয়ে দেশের নেতৃত্ব দিবে তাদের রয়েছে হলের আবাসন সংকট, ডাইনিং সমস্যা। তাই প্রয়োজনে হল নির্মান করা এবং ডাইনিং সমস্যা সমাধানে ভালো মানের খাবার দেওয়া এবং মনিটরিং করা।

পড়াশোনা করার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত কল্পে কৃষি অনুষদের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যানবাহনের উচ্চশব্দে হর্ন বাজানো, মাইকিং করা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে ক্লাসের সময় যানবাহন চালানো বন্ধ করা, ক্লাসে শিততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র দেওয়া, নিরাপত্তা আরও জোরদার করা। আর একাডেমিক বিষয়ে বলতে গেলে দেখা যায় একই কোর্স কন্টেন্ট বিভিন্ন বিভাগে পড়ানো হয় এতে কোর্স রিপিটেশন হয় তাই প্রতিটি কোর্স আলাদা আলাদা করে অনুষদীয় বিভাগ গুলোর মাঝে ভাগ করে দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে বলে আশা করি।

উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা থেকে রেহাই পাবে এবং পড়াশোনার জন্য সুষ্টু পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর