টাকা না পেয়ে ট্রান্সফরমার খুলে নিলো দালাল

পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিতে দালাল আয়নাল হকের মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা করে দিয়েছেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের ৪০টি পরিবার। স্থানীয় দালাল আয়নাল হকের চাহিদা মতো আরও ২ হাজার টাকা করে না দেয়ায় এক বছরেও বিদ্যুতের দেখা মিলেনি তাদের।

এমনকি টাকা না পেয়ে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ জন্য লাগানো ট্রান্সফরমারটিও সম্প্রতি খুলে নিয়ে যায় আয়নাল। এ বিষয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী গ্রামবাসী বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের কামাতপাড়া, অধিকারীপাড়া, সর্দারপাড়া ও মুনপাড়া, স্কুলপাড়া এলাকার ৪০টি পরিবারের কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার নাম করে ২০১৮ সালে মধ্যভাগে মিটার প্রতি ৬ হাজার টাকা তোলে পার্শ্ববর্তী সোনাপোতা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে আয়নাল হক।

স্থানীয়দের কাছে সে পল্লী বিদ্যুৎ ও ঠিকাদারের দালাল বলে পরিচিত। চলতি বছরের মার্চ মাসে ওই এলাকায় সরকারিভাবে বিদ্যুতের খুঁটি, তার ও ট্রান্সফরমার লাগানো হয়। এক পর্যায়ে ঠিকাদার ও পল্লী বিদ্যুতের কথা বলে আয়নাল তাদের কাছে আরও ২ হাজার করে টাকা করে দাবি করে।

টাকা না দিলে সে ট্রান্সফরমার খুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। ভুক্তভোগীরা অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করলে চলতি বছরের জুলাই মাসে খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার খুলে বাসায় নিয়ে যান। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা কোন ব্যবস্থাই নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

টাকা দিয়েও এক বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। প্রতিবাদ করলে উল্টো হুমকিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক, ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপককে।

দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের অধিকারীপাড়া এলাকার আবু হানিফ বলেন, আমাদের কাছে বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারের কথা বলে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে আয়নাল। খুঁটি, তার ও ট্রান্সফরমার লাগানোর পর সে আরও ২ হাজার টাকা করে দাবি করে।

আমরা তা দিতে অস্বীকার করায় সে ট্রান্সফরমার খুলে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে আমরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বার বার অভিযোগ করলেও কোন কাজ হয়নি। তিনি আরও বলেন, ডাকাতি, ছিনতাই, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ আয়নালের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এক সময় ছাত্র শিবির করলেও এখন সে ক্ষমতাশীন দলের লোকজনের ছত্রছায়ায় অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। একই কথা জানান ওই এলাকার আব্বাস আলী, আলফাজ উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, রঞ্জন কুমার।

স্কুলপাড়া এলাকার শহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ৩টি পরিবারের কাছে আয়নাল বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে ২৪ হাজার টাকা নিয়েছে। তারপরও এখনো বিদ্যুতের কোন খোঁজ নেই।ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান জানান, বিদ্যুতের খুঁটি, তার ও ট্রান্সফরমার সংযোগের কাজটি ঠিকাদার করে থাকেন।

আমরা মিটারের জামানত বাবদ ৪’শ টাকা এবং সমিতির সদস্য ফি বাবদ ৫০ টাকা মোট ৪৫০ টাকা জমা দিলেই গ্রাহককে মিটার ও সংযোগ দেই। শতভাগ বিদ্যুতায়ন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধিনে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়।

ট্রান্সফরমার খুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনলাম। আমরা ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন পাঠিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আয়নাল হকের সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর