সিরাজগঞ্জে সংবাদ প্রকাশের পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কারাগারে!

চলতি বছরের ৩০ জুন দৈনিক যুগান্তর ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম বার্তা বাজারে ‘সিরাজগঞ্জে এমবিবিএস পাস না করেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার! শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের সেই ভুয়া ডাক্তার কামরুল হাসান অপু এখন কারাগারে।

তিনি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার সাবালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে ও সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল বাজার এলাকার বিশিষ্ট ঠিকাদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী এসএম নজরুল ইসলামের জামাতা। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি সিরাজগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাদৎ হোসেন প্রাং এর আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তার আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুর রউফ পান্না। তিনি জানান, ৩০ জুন যুগান্তরসহ অনলাইন বার্তা বাজারে ‘সিরাজগঞ্জে এমবিবিএস পাস না করেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার! শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ও কামারখন্দ থানাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।

কিন্তু উভয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ওই ভুয়া ডাক্তার পলাতক ও ডায়াগনষ্টিক কমপ্লেক্সটি বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত জনস্বার্থ বিবেচনায় কামারখন্দ থানাকে মামলা করার নির্দেশ দিলে ১৬জুলাই ২০১৯ এসআই ইয়ামিন সরকার বাদি হয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২৮(২)/১৯(১)সহ পেনাল কোর্টের ৪১৯/৪২০ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ০৮ এবং জিআর নং-৬৩/১৯। তিনি আরো জানান, কথিত ডাক্তার কামরুল হাসান অপু ১৯ আগষ্ট উচ্চ আদালত থেকে ১৪দিনের জন্য জামিনপ্রাপ্ত হন। ২ সেপ্টেম্বর সোমবার ছিলো ওই জামিন মেয়াদের শেষ দিন।

উল্লেখ্য, ভুয়া ডাক্তার কামরুল হাসান অপু প্রায় তিন বছর ধরে কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল বাজারের বিশিষ্ট ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী এসএম নজরুল ইসলামের মেয়েকে ডাক্তার পরিচয়ে বিয়ে করে তার শাশুড়ির নামে প্রতিষ্ঠিত ইবনেসিনা আস্থা ডায়াগনষ্টিক কমপ্লেক্সে বসে প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি তার ‘প্রেসক্রিপশন, ভিজিটিং কার্ড ও সাইন বোর্ডে এমবিএস (আরএমসি), পিজিটি (মেডিসিন), সিএমইউ আল্ট্রা, প্রাক্তন অনারারি মেডিকেল অফিসার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ব্যবহার করছিলেন। এছাড়া শিশু, বাতব্যথা, মাথাব্যথা, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ’ বলে এক শ্রেণীর দালালের মাধ্যমে গ্রামের নিরীহ, গরীর ও অসহায় মানুষদের চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন।

সম্প্রতি যুগান্তরের তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার কামরুল হাসান অপুর প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে কামারখন্দে গিয়ে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি ডাক্তার কামরুল হাসান অপুর স্মরণাপন্ন হন। ডাক্তার সাহেব তাকে ডায়াবেটিস, লিপিট প্রফাইলসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন।

এ সময় কথিত ডাক্তারের সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় এ প্রতিবেদকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তিনি টাকা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে শুধু ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার চেকাপ করে চলে যান। পরে ২৬ জুন ফের ওই ডাক্তারের কাছে গেলে তার অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে এ প্রতিবেদক তার বিএমডিসি’র নিবন্ধন নম্বর দেখতে চান। এ সময় ডাক্তার অপু নানা টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ডাক্তার অপু জানান, তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। পেটের তাগিদে ভুয়া ডাক্তার সাজতে বাধ্য হয়েছেন। এমন কাজ অপরাধ বলেও স্বীকার করেন তিনি।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর