ভিসিপন্থীদের মানববনন্ধন, শিক্ষার্থীদের অবরোধ ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আগামীকাল অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে শিক্ষকরা এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ’ ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও চলমান আন্দোলনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষক পরিষদের সদস্য আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’র সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়নে বাধা দিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারবেনা’।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি এর আগে আমাদের সকলের স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরির সময়ও একদল মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নের্তৃত্বে আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।

সেরকম আমাদের ক্যাম্পাসের উন্নয়নেও যতপ্রকার বাধাই আসুক তা ভিসির নের্তৃত্বে সম্পন্ন হবে। বাধা দিয়ে কেউ কখনো টিকতে পারেনি’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অসিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন আমাদের সবার কাম্য। উন্নয়ন করতে হলে কিছু গাছ কাটতেই হবে।

এখন এর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করা হচ্ছে তা স্পষ্ট এই উন্নয়ন কাজে বাঁধা সৃষ্টির জন্য। তদন্ত এবং স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কেউ কারো বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে পারেন না।’

গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে বলেন,‘আমরা সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে তুলতে চাই।

কিন্তু এখানে আবাসন সংকট, একাডেমিক ভবনের অভাব, ক্লাস রুমের সংকট।এত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কিন্তু এখানে একটি গোষ্ঠী উন্নয়নে বাধা দিয়ে এটাকে রাজনীতি করার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’

মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, অধ্যাপক হানিফ আলী, অধ্যাপক এ.এ. মামুন, অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেন, অধ্যাপক এ.টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক বশির আহমেদ, অধ্যাপক মজিবর রহমান, অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার প্রমুখ।

দীর্ঘ সময় মানববন্ধনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমেস্থবিরতা দেখা যায়। এ সময় বিভিন্ন অফিস থেকে সেবা না পেয়ে সেবা প্রার্থী শিক্ষার্থীদের ফিরে আসতে দেখা যায়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে জোরপূর্বক মানববন্ধনে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের বরাতে ক্যাম্পাসব্যাপী প্রচারণা চালানো হয়। প্রচারণায় সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধনে অংশ নিতে ‘নির্দেশ’ করা হয়।

এদিকে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকাল নয়টা থেকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে থেকে অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পাপ্পুর সঞ্চালনায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই যৌক্তিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসন উঠে পড়ে লেগেছে।

আমরা বলতে চাই প্রশাসন মহা-বিশৃঙ্খলার মাস্টার প্লান হাতে নিয়েছে। আপনারা দেখেছেন টেন্ডার ছিনতাই থেকে শুরু করে অর্থ ছিনতাই এই সব অনিয়ম কারা করেছে। গ্রামের কৃষকদের ট্যাক্সের টাকা প্রশাসন এই ভাবে দুর্নীতি করতে পারে না। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবেই যতক্ষণ না আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়।’

জাহাঙ্গীনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তিন দফা দাবি মানার জন্য প্রশাসনেকে যে সময় দেওয়া হয়েছে তারা সেই সময়ে আমাদের দাবি মানেননি।

এরই প্রেক্ষিতে আমাদের পূর্ব ঘোষিত প্রশাসনিক ভবন অবোরধের কর্মসূচিত আপনাদের পাশে পাবার আশা করি। আমরা আশা করি আপনারা আমাদের আগামী সকল কর্মসূচিতে সাথে থাকবেন।’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইয়ান রাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিপক্ষে যে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ সে অভিযোগের জন্য আমরা চাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। কিন্তু প্রশাসন সেটা চায় না।

আমরা বলতে চাই উপাচার্য যদি এই দুর্নীতি না করে থাকেন তাহলে তার তদন্তের সম্মুখীন হতে সমস্যা কোথায়? এখানে স্পষ্ট তিনি এই দুর্নীতিতে জড়িত।’

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কার্যকরী সদস্য মিখা পিরেগু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী) সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ প্রমূখ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক রেজাউল করিম তালুকদার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন জয়, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম প্রমুখ।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর