অল্প বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্ধি

কয়েক দিনের জমা বৃষ্টির পানিতে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদরের বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী, খাল ও নালা দিয়ে পানি প্রবাহ বাধা গ্রস্থ হওয়ায় মূলত এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ। এ ছাড়া অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ করতে যেয়ে যত্রতত্র বেড়িবাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটক রাখায় পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করছে।
শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের রথখোলা বিল, বদ্দিপুর কলোনী, ডয়ের বিল, কাটিয়া মাঠপাড়া, পলাশপোল, ইটাগাছা ও লাবসা ইউনিয়নের ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের মাগুরা দাস পাড়া, নলকুড়া, কৈখালী এলাকায় কোমর সমান পানি। এসব এলাকার রাস্তার উপর রয়েছে হাঁটু পানি। কোথাও বাড়ির উঠানে আবার কোথাও বারান্দায় উঠছে পানি। ফলে ওইসব পরিবারের সদস্যদের ভোগান্তির শেষ নেই। একই অবস্থা, কামাননগর, ইটাগাছা, মাছখোলা বিলসহ সদরের বিস্তীর্ণ এলাকার।

রথখোলা বিলের ব্যাংক কর্মকর্তা বিমল সানা জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিগত কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টিতে তার বাড়িসহ বিলের মধ্যকার সকলের বাড়ির উঠানে কোমর সমান পানি। হাঁটু পানি জমেছে রাস্তার উপরও । পৌরসভার পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরেই বৃষ্টির পানিতে তাদের এলাকা তলিয়ে যায়। বাড়ি থেকে ছেলে মেয়েদের বাইরে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চারিদিকে পানির কারণে তারা পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন। একই এলাকার চাকুরিজীবী প্রদীপ মন্ডল বলেন, উপজেলার সামনে দিয়ে যে কালভার্ট রয়েছে সেখান থেকে আর পানি নিষ্কাশন হয় না। এ অবস্থা নিরসনে ড্রেন কেটে একাডেমী মসজিদের সামনে মিশিয়ে দিয়ে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের পাশ দিয়ে প্রাণসায়ের খালে পানি ফেলতে হবে। অথবা টিএন্ডটি এর পাশ দিয়ে ড্রেন তৈরি করে প্রানসায়েরের পানি সরানোর ব্যবস্থা করলে রথখোলা বিলের পানি সরানো সম্ভব। এ ছাড়া যে কালভার্ট দিয়ে আগে পানি নিষ্কাশন হতো তা পরিষ্কার করতে হবে। সুলতানপুরের মধ্যকার কালভার্টটিও পরিষ্কার করার আহবান জানান তিনি।

পশ্চিম কামাননগরের বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, এবার বৃষ্টির পরিমান যথেষ্ট কম হলেও তাদের এলাকায় হাঁটু পানি জমেছে। একই কথা বলেন ইটাগাছার আবু সাঈদ বিশ্বাস। ১০ দিন ধরে তাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি দেখিয়ে তিনি বলেন, তাদের এলাকার ও বাঁকাল বিলের পানি আবাদানির খালের মাধ্যমে কোলকাতা খাল হয়ে লাবণ্যবতী খাল হয়ে শাঁখরা স্লুইজ গেট হয়ে ইছামতী নদীতে পড়তো। এখন প্রভাবশালীরা যত্রতত্র অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের করায় ও খালে নেট পাটা দেওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আর কিছুদিন বৃষ্টি হলে পানি সরতে না পেরে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
বদ্দীপুর কলোনী এলাকার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুকুমার দাস বলেন, এলাকার পানি সরছে না। মাছ চাষের নামে প্রভাবশালীরা ছোট ছোট খালগুলো দখল করে নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

লাবসা ইউপি’র নলকুড়া গ্রামের সাতক্ষীরা জেলা সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আমিনুর হোসেন, আকবর আলিসহ কয়েকজন বলেন, পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় তারা খুব কষ্টে আছেন। লাবসা ইউপি সদস্য কাজী মনিরজ্জামান বলেন, একমাত্র প্রশাসনই ইছা করলে উদ্যোগ নিয়ে এ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারে।
এদিকে সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা, দাসপাড়া, কৈখালি ও খেজুরডাঙ্গি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের বাড়িঘর, চিংড়ি ঘের ও ফসলী ক্ষেতে এখন পানির নীচে। তাদের বাড়িতে পানি। পানির কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলেও তার সফলতা এলাকার মানুষ পায়নি। ফলে প্রতিদিনের বৃষ্টিতে পানির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় পানি অপসারনের দাবিতে মাগুরা পশ্চিমপাড়া মসজিদের পাশে সড়কের ধারে কয়েক’শ মানুষ সমবত হয়ে মানববন্ধন করেছে। বক্তারা এক সপ্তাহ সময় সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, এ সময়ের মধ্যে খাল ও নদী থেকে নেট পাটা তুলে দিয়ে অবৈধ বেড়ি বাঁধ কেটে দিতে হবে। অবিলম্বে পানি নিষ্কাশন করা না গেলে জনগন বাঁধ ও অবৈধ বেড়ি বাঁধ কেটে দিতে বাধ্য হবে।

সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, বেতনা, মরিচাপ ও লাবণ্যবর্তীসহ বিভিন্ন নদীর সংযোগ খালগুলো এখন প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছে। স্লুইজ গেটের মুখগুলো এখন পলি জমে অকেজো হয়ে গেছে। এ ছাড়াও বিলের তলদেশ থেকে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বিলের পানি নদীতে পড়তে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যাবহুল খাল ও নদীগুলো চিহ্নিত করে নকশা তৈরি করলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব। শনিবার বিকালে তারা পুরাতন হাটখোলা, বদ্দিপুর কলোনী, শহরের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বর এলাকায় পথসভা করে পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, পানি নিষ্কাশনের জন্য নেট পাটা ও বাঁধ অপসারন করার দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তারা ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিরোধ সচেতনা সৃষ্টির জন্য নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি খালের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। কয়েকটি টিম গঠণ করে প্রতিদিন কোন না কোন এলাকার খালের মধ্যকার নেট পাটা অপসারণ করার পাশাপাশি স্লুইজগেটের সামনের জায়গা পরিষ্কার করে পানি সরানোর কাজ চালানো হচ্ছে। শনিবার তারা রথখোলার বিল ও মাছ খোলা বিল পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর