দেশের মাটিতে বিদেশী ফল

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতি ঋতুতেই বাংলা সাজে তার নিজস্ব সাজে। ফুলে ফলে ভরে উঠে চির সবুজ বাংলার বুক। নানান দেশী-বিদেশী ফলের সমাহার এই মৌসুমী জলবায়ূর দেশে।

বর্তমানে বাংলাদেশে দেশী ফলের সাথে বিদেশী ফলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশী ফল গুলো দেশের মানুষের কাছে নতুন এবং আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে। আর ফল চাষীরা বেশী দামে তা বিক্রয় করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। তাই দিন দিন বিদেশী ফলের জাত বাড়ানোর পাশাপিাশি চাহিদাও বাড়ছে ব্যাপক পরিমাণে।

অনেক বিদেশী ফল আছে যেগুলো বাংলাদেশে সার্থকভাবে চাষ করা সম্ভব যেমন স্ট্রবেরী, ড্রাগনফল, এ্যাভোকেডো, ম্যাঙ্গোঁস্টিন, স্ট্রবেরী, কিউই, রাম্বুটাান, লংগান, ল্যাংসাট, জাবাটিকাবা, শান্তল, পীচফল, আলুবখারা, পার্সিমন, এগ ফল, ব্রেডফল, এ্যাননি, নাসপাতী এবং ডুরিয়ান অন্যতম । বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে কোন মিল না থাকা স্বত্ত্বেও ফলগুলোর পরিবেশিক চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। কারণ এই ফলগুলোর অনেক জাত থাকায় বাংলাদেশের জলবায়ূতে সাফল্যের সাথে জন্মানো সম্ভব হয়েছে।

স্ট্রবেরিঃ আদি নিবাস থাইল্যান্ড। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এই ফলের উৎপাদন ভাল। বছর কয়েক আগে বগুড়া রাজশাহী নাটোর প গড় অ লে স্ট্রবেরি চাষের ধুম পড়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের জৈব প্রযুক্তিবিদ ড. এম মঞ্জুর হোসেন স্ট্রবেরি ফল উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করে সফল হন। গবেষণা দল টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে সোমাক্লোনাল ভেরিয়েশন প্রযুক্তির সাফল্যে স্ট্রবেরির তিনটি জাত উদ্ভাবন করেন। এই দেশের আবহাওয়ায় স্ট্রবেরি চাষ উদ্ভাবনের পর এর চারা বিতরণ শুরু করেন।
ড্রাগনফলঃ প্রথম প্রর্বতন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার, ২০০৭ সালে। এ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম. এ. রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড থেকে। হালকা মিষ্টি-মিষ্টি স্বাদের এফল দেশের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এ গাছে শুধুমাত্র রাতে ফুল দেয়। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ। যাকে ‘মুনফ্লাওয়ার’ অথবা ‘রাতের রাণি’ বলে অভিহিত করা হয়।

কমলাঃ শীতের এই ফল আধা বিদেশী। দেশের নির্দিষ্ট এলাকায় এই কমলা ফলে। একটা সময় শুধু সিলেটেই কমলা ফলেছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ও প গড়ে বিচ্ছিন্নভাবে কমলা ফলছে। শীত মৌসুমে ভারতীয় কমলার পাশাপশি দেশের কমলা বিক্রি হয়।
কিউয়িঃ একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। অন্যান্য ফলের চেয়ে একেবারেই অন্য ধরনের স্বাদ এবং এর উচ্চ পুষ্টিমূল্যের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশসমূহে কিউয়ি খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। আমাদের দেশে এটি খুব বেশি পরিচিত না হলেও একেবারেই যে অপরিচিত টিক তাও না। বড় বড় কাঁচাবাজার এবং সুপার শপগুলোতে খুঁজলেই অনায়াসে পাওয়া যায় চমৎকার স্বাদের এই ফলটি। কিউয়ি নিউজিল্যান্ডের ফল হিসেবে পরিচিত হলেও এর আদি নিবাস চীনের দক্ষিণাংশে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে মিশনারিদের মাধ্যমে কিউয়ি চীন থেকে নিউজিল্যান্ডে আসে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে ইটালি, গ্রিস ও ফ্রান্সে। কিউয়ি ফলের উপরে বাদামি, রোমশ আবরণ এবং ভেতরটা উজ্জ্বল সবুজ রঙের খাদ্যযোগ্য অংশ। ফলের ভেতরে ছোট ছোট কালো রঙের বীজ থাকে।

শান্তলঃ পাকিস্তান থেকে এ ফলটি বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। লটকন পরিবারের। শান্তল গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে পরিচিত।

রাম্বুটানঃ আকর্ষণীয়, অত্যন্ত ও রসালো ফল। সাদা, স্বচ্ছ মিষ্টি গন্ধযুক্ত শাঁস এ ফলের ভক্ষণীয় অংশ। গায়ে লাল ও নরম কাঁটা থাকার কারণে এদের লিচু থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখায়। অনেক স্থানে রাম্বুটানকে চুলওয়ালা লিচুও বলা হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণা লের জেলাসমূহ রাম্বুতান চাষের জন্য অধিক উপযোগী। তবে গাজীপুর, ভালুকা, ময়মনসিংহ, রাঙ্গামাটিতে কয়েকটি গাছে বেশ ভালোই ফল দিচ্ছে। ফল লিচুর মতোই থোকায় ধরে। ফল ডিম্বাকার থেকে গোলাকার। কাঁচাফলের রঙ সবুজ, পাকলে লাল হয়ে যায়। খোসা লম্বা খাটো সোজা বাঁকা ইত্যাদি নানা আকৃতির কাঁটাযুক্ত। তবে কাঁটাগুলো শক্ত নয়। খোসা ছাড়ালেই ভেতরে লিচুর মতো সাদা শাঁস পাওয়া যায়। শাঁসের স্বাদ মিষ্টি টক, রসালো। ভেতরে লিচুর মতো একটি বীজ থাকে, বীজ শক্ত, লম্বাটে, ডিম্বাকার ও বাদামি রঙের।

প্যাশন ফলঃ থাইল্যান্ড থেকে প্রথম প্যাশন ফল বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। প্যাশন ফলের গাছ লতানো হয় এবং মাচা করে দিতে হয়। এই ফলটি সারা বছর পাওয়া যায়। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের হাটভরতখালি গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান সুজা আইভরিকোস্ট থেকে প্যাশন ফল নিয়ে আসেন।

আভোকাডোঃ উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিখ্যাত ফল মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে পরিচিত। প্রায় ছয় বছর আগে মাইকেল কেসপার নামের একজন জার্মান নাগরিক ঢাকার গুলশান থেকে আভোকাডো গাছের দুটি চারা সংগ্রহ করে লাগিয়ে দিয়ে ছিলেন দেয়াল ঘেরা ওই ব্যাপ্টিষ্ট সংঘের ভিতরে। আভোকাডো অত্যন্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফল। কোলেস্টেরলমুক্ত উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ হওয়ায় বাংলায় এটিকে মাখন ফলও বলা হয়। যথেষ্ট ওষুধী গুন সম্পন্ন ও পুষ্টিকর হওয়ায় ফলটিকে ধরা হয় মায়ের দুধের বিকল্প। চিনির পরিমান কম হওয়ায় ফলটি অনায়েসে খেতে পারেন ডায়েবেটিস রোগীরাও। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধীও। এছাড়া ভিটামিন বি কে সি ও ই এর সবগুলো উপাদানই রয়েছে আভোকাডোয়। আভোকাডো দেখতে অনেকটা লেবুর মত এবং অত্যন্ত মাংসাসী ফল। কাঁচা আভোকাডো রান্নায় মাংসে সবজী এবং খাবার টেবিলে সালাদ অথবা শরবত হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া পাকা আভোকাডো ফলের খোসা ছাড়িয়ে সরাসরি মাখনের মতও খাওয়া যায়।

বাউকুল: ৫টি দেশ থেকে প্রায় ১৯টি জাতের কুল নিয়ে আসা হয়। পরে দেশে নিয়ে এসে জার্মপ্লাাজম সেন্টারে পরিচর্যা করে একটি জাতকে ভাল বলে নির্বাচিত করা হয়। পরে সেই ফলটি বাউকুল হিসেবে পরিচিত লাভ করে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

লঙ্গানঃ এটিও লিচু পরিবারের গ্রীষ্মকালীন ফল। গাছ বামন আকৃতির, পাতা ডিম্বাকার এবং ফলের রং খয়েরী এবং সাদা পাল্পযুক্ত হয়।

এছাড়া চেরি পাকিস্তান থেকে, ভারত ও নেপাল থেকে নাশপতি এং জাপান থেকে পার্সিমন এদেশে নিয়ে আসা হয়। এখন জার্মপ্লাাজম সেন্টারে এর চাষাবাদ চলছে। এছাড়া ৩ প্রজাতির চাইনিজ লিচু জার্মপ্লাজম সেন্টারে নিয়ে আসা হয়।

বাংলাদেশের আবহাওয়াও দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের চাহিদা। বিভিন্ন বিদশেী ফল বাংলাদেশের জন্য উপযোগী করে চাষ করা হলে দেশের ফলের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে এবং দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর