যে ধাপ সমূহ পেরোলে জামিনে মুক্তি পাবেন মিন্নি

বরগুনার রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি পেতে আরও কয়েক ধাপ পার করতে হবে। এসব ধাপ অতিক্রম করলেই কেবল তার মুক্তি মিলবে।

তবে রাষ্ট্রপক্ষ যদি আপিল বিভাগে আবেদন করে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। হাইকোর্টে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে থাকা আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বলেন, বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের রায় বের হওয়ার পর এটা বরগুনা আদালতে পাঠানো হবে।

এরপর সেখানে জামিননামা দাখিল করা হবে। সেখান থেকে কারাগারে পাঠানো হবে আদেশটি। কারাকর্তৃপক্ষ আদেশ পাওয়ার প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাকে মুক্তি দেবেন।

তিনি বলেন, এরমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ যদি আপিল বিভাগে আবেদন করেন, আর আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন তাহলে মিন্নি আর বের হতে পারবেন না। তবে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলে তো মুক্তিতে বাধা থাকবে না। এদিকে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে তারা আপিল বিভাগে আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যেসব বিবেচনায় মিন্নির জামিন

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) জামিনের রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেফতারের আগে দীর্ঘ সময় স্থানীয় পুলিশ লাইনসে আটক ও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের আগে দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

‘সুতরাং আসামি তদন্তকে প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকা সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার ব্যতিক্রম অর্থাৎ আসামি একজন নারী। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেওয়া ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করেছি।’

এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নির জামিন প্রশ্নে জারি রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। তবে মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থেকে মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারবেন না।

এদিকে মিন্নির জামিনে তার বাবা সন্তোষ প্রকাশ করলেও রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার কথা জানিয়েছে। মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন আইনুন্নাহার সিদ্দিকা ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরওয়ার হোসাইন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাহানা পারভীন। এছাড়া জামিনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।

রিফাত শরীফ হত্যা

২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর মধ্যে মামলার বেশ কয়েকজন আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়।

মিন্নি গ্রেফতার

১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওইদিন মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

জামিন নাকচ

২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওইদিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর ৩০ জুলাই বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করেন।

হাইকোর্টে জামিন আবেদন

পরে হাইকোর্টে আবেদনের পর গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে গেলে আইনজীবীরা আবেদন ফেরত নেন।

পরবর্তী বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে শুনানির পর ২০ আগস্ট এক সপ্তাহের রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সিডি (কেস ডকেট) নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। এছাড়া মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয় জানিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে পুলিশ সুপারকে (এসপি) লিখিত ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়।

সে অনুসারে ২৮ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা কেস ডকেট নিয়ে হাজির হন। ওইদিন শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর