আমার স্বপ্নের ক্যাম্পাস

জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষ নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। নতুন পরিবেশে মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে নতুনভাবে। তেমনি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের এই যে প্রবণতা তা পরিপূর্ণতার স্পর্শ পায় বিশ^বিদ্যালয় জীবনে। প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় বিশ^বিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজের সুপ্ত প্রতিভাগুলির বিকাশ ঘটাতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে। দক্ষ একজন জাতির কারিগর হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে একটা স্বপ্ন, আকাঙ্খা লুকিয়ে থাকে। বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস কেমন হবে তা নিয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আসিফ, মো. জাহিদুল ইসলাম, মন্দিরা সাহা এবং শেখ রিপা।
মো. আব্দুল্লাহ আল আসিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্ন পূরণের জায়গা। সমগ্র বিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন যা ঘটছে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নতুন যে জ্ঞান তৈরি হচ্ছে তা আমাদের কাছে পৌঁছে দিবে বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের দেশমাতৃকা নিয়ে জানার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। জনগণের অর্থে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় জনগণ তথা দেশের উন্নতিতে একজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার দায়িত্বটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর বর্তায়। আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে নতুন নতুন যে জ্ঞান সৃষ্টি হচ্ছে তা যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারিত হয় সেটা চাইবো। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যুগোপযুক্ত গবেষণাতে শিক্ষকদের পাশে থেকে কাজ করতে চাইবো। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা বিদ্যমান রাখার জন্য যথার্থ পদক্ষেপ নিবে। এখানে বিদ্যমান সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে যেন পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকে সেটার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ যেন প্রশাসন গ্রহণ করে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী বিকৃত রুচি, চিন্তা ও মানসিক পীড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যেন শুরু না করে তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।

মন্দিরা সাহা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তার স্বপ্নের কথায় বলেন, ছোটবেলায় রচনায় পড়তাম, সুজলা, সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সবারই মনে হবে,সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়। চারদিকে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ, পাখিদের কলকাকলি আর ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঢাকা এই বাকৃবি। তবে আমার ক্যাম্পাস নিয়ে বলতে গেলে কিছু সমস্যার কথা বলতে হয় প্রথমতই আসে ইন্টারনেট এর সুব্যবস্থা। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট এর বদৌলতে পৃথিবী চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। কিন্তু আবাসিক হলগুলোতে রয়েছে ওয়াইফাই এর সংকট। অনেক প্রয়োজনীয় সময়েও ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। ওয়াইফাই থাকলেও সংযোগ এতটাই দুর্বল যে তা ছাত্রীরা ব্যবহার করতে পারছেনা। এর পর আসে শিক্ষাদানের পদ্ধতি। এই বাকৃবি এর অতিপরিচিত দৃশ্য হচ্ছে, রাফি ফটোস্ট্যাট অথবা জব্বারে ছাত্রছাত্রীদের চেথা নিয়ে দৌড়াবার দশ্য। এই চোথা প্রথাই শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্বস এনেছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই চোথা মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাশ করে যাচ্ছে, আদৌ তারা কিছু শিখছে কিনা সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বারবার। তাই শিক্ষাব্যবস্থা এমন হতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা কিছু শেখে, পাসের জন্য শিক্ষা নয়, শেখার জন্য।

মো. জাহিদুল ইসলাম তার মনের কথা ব্যাক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। নামটা শুনেই মনে এক ধরনের প্রশান্তি চলে আসে, কারন টা আমি আর আমার ক্যাম্পাস। এবছর বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছর পার করে ৫৯ বছরে পা দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নানা পরিবর্তন ঘটেছে। দেশের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা করা এ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পথিকৃৎ বিদ্যাপিঠ বলে পরিগণিত। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়র প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে যেন থাকে নতুন কিছু করার সুযোগ দেওয়া হয় এই যেমন উদ্যোক্তা। আর বেশি বেশি গবেষনার মাধ্যমে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় কে অনন্য উচ্চতায় দেখতে চাই, তাছাড়াও বেশি বেশি প্রেজেন্টেশন এর ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যাল গ্রাজুয়েটরা দেশে বিদেশে আলো ছড়াতে থাকবে।

শেখ রিপা তার স্বপ্নের ক্যাম্পাস কেশন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে বলেন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য। বিশ^বিদ্যালয় পরবর্তী জীবনে আমাদের গবেষনার জন্য তাত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করতে হবে। প্রতিটি সেমিস্টারে বিভিন্ন অনুষদ ভিত্তিক সেমিনার করা প্রয়োজন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত নতুন জাত বা গবেষনা কার্যক্রম এবং ফলাফল বিশ্লেষন করা হবে যা আমাদের চিন্তা শক্তিকে চালিত করবে। প্রথম থেকেই কোন ছোট ছোট গবেষনা মূলক কাজে আমাদের যুক্ত করে দিতে হবে যাতে আমরা আরও দক্ষ হতে পারি। ক্লাসরুমের পরিবেশ উন্নতি করতে হবে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যাবহার করে শুধু স্লাইড পরিবর্তন না করে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কোন বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া। ব্যবহারিক খাতা লেখার বদলে আমাদের প্রেজেন্টেশন এবং মাঠ পর্যায়ের মানুষের সাথে কাজ করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যাবস্থা করা। আমার মতে উক্ত বিষয় গুলো যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে আমার স্বপ্নের মত একটি ক্যাম্পাস হয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করি।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর