দিন দিন বাড়ছে দেশি মাছের বিলুপ্তি

কথায় বলে ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’। মাছের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সাথে একটা ঐতিহ্য রয়েছে। তবে নদী, নালা ও পুকুরভরা মাছের দেশ এখন প্রায় খাল-বিল-নদী-নালা শূন্য। নদীর উপর বাধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে যার কারণে নদী শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

আর যেসব নদী অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলোতে দূষণের মাত্রা এত বেশি যে মাছের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাল বিল ভরাট করে বাসস্থান, স্থাপনা ও খামার বানানো হচ্ছে।

কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বৃষ্টির পানি বা সেচের মাধ্যমে বিল, জলাশয়গুলোতে গিয়ে পড়ে এবং মাছের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশীয় মাছগুলো।

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্য মিঠা পানির মৎস্য প্রজাতি ২৬০ টি, বিদেশী মৎস্য প্রজাতি ১২ টি, মিঠা পানির চিংড়ি প্রজাতি ২৪ টি, সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতি ৪৭৫ টি, সামুদ্রিক চিংড়ি প্রজাতি ৩৬ টি। বাংলাদেশের পরিবেশ মিঠা পানির মাছ চাষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।

তবুও বর্তমানে দেশে প্রায় ৬১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ প্রায় বিলুপ্ত, ৩৫ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন এবং ২২ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্ত হবার পথে বাঘাইর, পিপলা শোল বা বাক্কা মাছ, মহাশোল, নান্দিলা মাছ, চান্দা, ভাঙ্গান বাটা, খরকি মাছ, কালো পাবদা, চেনুয়া মাছসহ বেশ কিছু মাছ রয়েছে।

এই মুহুর্তে দেশের ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।বাংলাদেশে বিপন্ন মাছের মধ্যে রয়েছে— পাঙ্গাস, দারি, ককসা, টিলা বা হিরালু, টিলা ককসা, রানি বা বউ মাছ, বেতাঙ্গি, বেটি বা পুতুল মাছ, কালা বাটা, ঘর পোয়া, ঘর পইয়া, ঘোড়া মাছ, এলানগা, কচুয়া পুটি, বোল, চিতল, গজার, টেংরা, রিটা, গাঙ্গিনা বা চাকা মাছ, বট শিং, ঘাউড়া, সাল বাইম।

এছাড়াও সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে বাও বাইম, চাপিলা, গুতুম, পুঁইয়া, পিয়াসি, জারুয়া বা উট্টি, ছেপ চেলা, গোফি চেলা, বাটা মাছ, নারু মাছ বা গনিয়া, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা, বেলে, শিং, আইড়, বোয়াল, তেলি, কুইচ্চা মাছ, বামোস মাছ। এগুলো সন্ধান ও সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে সেগুলো অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের মধ্য বদ্ধ জলাশয় ৭,৮৯,৩৪১ হেক্টর, পুকুর ৩,৭১,৩০৯ হেক্টর অক্সবো লেক (বাওড়) ৫,৪৮৮ হেক্টর, চিংড়ি খামার ২,৭৫,২৭৪ হেক্টর, পেন কালচার ৬,৭৭৫ হেক্টর, খাঁচায় মাছ চাষ ৭ হেক্টর, মৌসুমি জলাশয় ১,৩০,৪৮৮ হেক্টর। আর উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্য ৩৯,১০,০৫৩ হেক্টর, নদী ও মোহনা ৮,৫৩,৮৬৩ হেক্টর, সুন্দরবন ১,৭৭,৭০০ হেক্টর, বিল ১,১৪,১৬১ হেক্টর, কাপ্তাই লেক ৬৮,৮০০ হেক্টর, প্লাবনভূমি ২৬,৯৫,৫২৯ হেক্টর। সামুদ্রিক জলসম্পদ ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার।

তবে শহর ও গ্রাম দুইখানেই নদী-খালসহ সব ধরণের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও।

আমরা যদি আমাদের জলাশয় গুলোকে মাছ চাষের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আশা করা যায় বাংলাদেশ একদিন মাছ উৎপাদনে বিশে^র প্রথম হতে পারে।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর