পাশের ভবনে লাফিয়ে ২২ তলা হেঁটে নামেন অন্তঃসত্ত্বা অ্যাঞ্জেলা!

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিন ওই ভবনের অষ্টম তলায় আশিক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন অ্যাঞ্জেলা গোমেজ। জীবন বাঁচাতে ওইদিন তিন মাসের গর্ভবতী অ্যাঞ্জেলা এফ আর টাওয়ার ছাদ থেকে লাফিয়ে পাশের ভবনে পড়েন। কথোপকথনে ওইদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি।

অ্যাঞ্জেলা বলেন, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে আমি ডেস্কে কাজ করছিলাম। এমন সময় হুট করেই আমাদের সিইও স্যার এসে বললেন, ভবনে আগুন লেগেছে, সবাই বেরিয়ে যান। পিওনকে বললেন, ইলেক্ট্রিক সুইচ বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। তার কথা শোনার পরই আমরা বের হওয়ার জন্য ভবনের নিচে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু একটু এগিয়ে যাওয়ার পরই শুনতে পাই ছয় এবং সাত তলায় আগুন লেগেছে এবং নিচে যাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এরপর আমরা উপরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। লিফট বন্ধ থাকায় সিঁড়ি দিয়েই আমরা উপরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ১২ তলায় যাওয়ার পরই একটা কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখি। ওই ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি প্রেগন্যান্ট থাকায় এবং সিঁড়ি দিয়ে উঠায় আমি আর সামনে যেতে পারছিলাম না। তখন আমাকে পেছন থেকে একজন বললেন, সামনে এগিয়ে যান। আমি বললাম, আর যেতে পারছি না। তখন পেছনে যিনি ছিলেন তিনি বলেন, সামনে যেতে না পারলে আমাদের যেতে দিন। ছয় ও সাত তলায় লোকজন মারা যাচ্ছে। আপনি পথ আটকে রাখলে অন্যরাও সমস্যায় পড়বে।

অ্যাঞ্জেলা বলেন, এরপর আর কোনো দিকে না তাকিয়ে কষ্ট করে ২২ তলার ছাদে পৌঁছাই। ছাদে গিয়ে দেখি অনেক লোক। তারা রেলিং দিয়ে পাশের ভবনে লাফিয়ে পড়ছেন। আহমেদ টাওয়ার নামে পাশের ভবনটিও ২২ তলার এবং সেখানে অনেকে দাঁড়িয়ে হাত এগিয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের জন্য। কিন্তু আমি রেলিং থেকে লাফিয়ে পড়তে পারছিলাম না। ভয় পাচ্ছিলাম। এ সময় অন্য ছাদের লোকেরা বলেন, লাফ দিন। না হলে অন্যদের আসার সুযোগ দিন। এই ছাদে থাকলে মারা যাব, এই চিন্তা করে বাঁচার আশায় আমি লাফিয়ে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, ওই ছাদে যাওয়ার পর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার রক্তপাত শুরু হয়। তখন আমি অন্যদের সাহায্য চাই। সবাই বলেন, এখান থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মূল রাস্তায় গিয়ে সিএনজি নিয়ে হাসপাতালে যান। ওই ভবনেও সব লাইট বন্ধ করে দেয়া হয় এবং লিফটও সচল ছিল না। তাই হেঁটেই ২২ তলার নিচে নামতে হয় আমাকে! নিচে গিয়ে রিকশা নিয়ে মূল রাস্তায় গিয়ে একটি সিএনজিতে চড়ে হাসপাতালে পৌঁছাই আমি।

আশিক ইন্টারন্যাশলের ফ্রন্ট ডেস্কে কর্মরত এই নারী বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পরও আমার রক্তপাত থামছিল না। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার পরও থেমে থেমে রক্তপাত হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলতে পারছেন না, আমার বাচ্চা বাঁচবে কিনা। ১৫ দিন পর তারা জানাতে পারবেন। আগুন থেকে আমি বেঁচে গেলেও আমার পেটে থাকা সন্তানের জীবন নিয়ে এখন শঙ্কার মধ্যে রয়েছি আমি।

অ্যাঞ্জেলা গোমেজ বলেন, ওই ভবনে কোনো ইমার্জেন্সি সিঁড়ি আছে কিনা তা আমার জানা নেই। কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনোদিন এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমি এখনও জানি না ওই ভবনে আদৌ কোনো ইমার্জেন্সি এক্সিট পয়েন্ট আছে কিনা? এই অগ্নিকাণ্ডে আমার তিনজন সহকর্মী মারা গেছেন। আরও বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি চাই, আর কাউকেই যেন এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সম্মুখীন হতে না হয়।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে। ওই আগুনে এখনও পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর