সাফল্যের ৫৮ বছরে বাকৃবির বিজয়গাঁথা

দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল ৫৮ বছর। দীর্ঘ এই সময়ে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়নের পথিকৃৎ হিসেবে কৃষি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। এবছরের ১৮ আগস্ট সফলতার ৫৯ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার পথিকৃৎ হিসেবে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে চিরসবুজে ঘেরা নৈসর্গিক পরিম-লে প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছিলো বাকৃবির মনোরম ক্যাম্পাস।

ময়মনসিংহে অবস্থিত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভেটেরিনারি কলেজকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। মানসম্মত উচ্চতর কৃষি শিক্ষা এবং কৃষি উন্নয়নের গুরু দায়িত্ব বহনে সক্ষম দক্ষ কৃষিবিদ, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে দু’টি অনুষদ নিয়ে ১৯৬১ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ভেটেরিনারি অনুষদে ৮টি, কৃষি অনুষদে ১৬টি, পশু পালন অনুষদে ৫টি, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ৫টি, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদে ৫টি এবং মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদে ৪টি করে মোট ৪৪টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৬টি অনুষদের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। ৪২টি শিক্ষা বিভাগে তিন সেমিস্টার মেয়াদে এমএস ডিগ্রি কার্যক্রম চালু আছে। বর্তমানে ৪০টি বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে বাকৃবি থেকে।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৮ হাজার ১২৯ জন স্নাতক, ১৮ হাজার ৪১৬ জন ¯œতকোত্তর এবং ৭২৩ জন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত মোট ৭,১০৩ জন শিক্ষার্থী। দেশের বাইরে থেকেও এখন বাকৃবিতে অধ্যয়ন করার জন্য শিক্ষার্থীরা আসেন। বাকৃবিতে মোট বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩ জন। বাকৃবিতে মোট ৫৮১ জন শিক্ষক, ৩৭২ জন কর্মকর্তা এবং ১,৩৮৯ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সম্প্রসারিত ভবন, জিটিআই ভবন এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১৩ টি হল রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি হল ছাত্রীদের জন্য। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি ও পরিবেশ বিজ্ঞানসহ প্রাগ্রসর গবেষণার লক্ষ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, সিড প্যাথলজি সেন্টার, ফিল্ড ফার্টিলিটি ক্লিনিক ল্যাব, আইপিএম ল্যাব, বায়োটেকনোলজি ল্যাব, ভেটেরিনারি ক্লিনিক এবং ফিশ নিউট্রিশন ও ডিজিজ ল্যাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইনষ্টিটিউট অব এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট। রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত প্রায় দুই হাজার আসনবিশিষ্ট শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, বিরল বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, প্ল্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক, দেশের প্রথম কৃষি মিউজিয়াম এবং উপমহাদেশের প্রথম ফিশ মিউজিয়াম। একটি বিশাল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ রয়েছে জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল শাখা, সুসজ্জিত অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, কমিউনিটি সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মন্দির। রয়েছে শহীদ মিনার, মুক্তিয্দ্ধু স্মৃতিস্তম্ভ, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিজয়-৭১ এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্ত্বর।

শিক্ষার্থীদের মননশীলতা বিকাশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের আওতায় বিনোদন সংঘ, সাহিত্য সংঘ, নাট্য সংঘ, সংগীত সংঘ, বিজ্ঞান সংঘ, ডিবেটিং ক্লাব ইত্যাদি নিয়মিতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা স্কাউটিং, বিএনসিসি ও বাঁধনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ভবিষ্যত জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিতে নিজেদের তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিটিআই, বাউএক, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও অনুষদসমূহ তাদের শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে জিটিআই নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সদস্যদের পেশাগত উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সিড প্যাথলজি সেন্টারের ব্যবস্থাপনায় বীজের স্বাস্থ্য বিষয় এবং আর্থসামাজিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে কৃষি আর্থনীতি এবং গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

সুদীর্ঘ ৫৮ বছরে বাকৃবি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বাংলদেশের কৃষি ক্ষেত্রে যার অবদান অপরিসীম। এগুলোর মধ্যে বাউ-৬৩, বাউকুল, বাউধান-২, নামে উফশী ধান জাত- সম্পদ ও সম্বল, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফসি সরিষা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচুর জাত, কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিয়াম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, শুকানো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল। আফ্রিকান ধৈ ার অঙ্গজ প্রজনন, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল, মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, রাণীক্ষেত রোগ সহজেই সনাক্তকরণে মলিকুলার পদ্ধতির উদ্ভাবন, মুরগির স্যালমোনোসিস রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি; হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম ফার্টিলিটি নির্ণয়, গাভীর উলানফোলা রোগ প্রতিরোধ কৌশল, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, সুষম পোল্ট্রি খাদ্য, গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক ব্যবহার, হাঁস-মুরগির উন্নত জাত উৎপাদন,

কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের উন্নয়ন, পশুসম্পদ উপখাত ও ডেয়রি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচনালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন, স্বল্প ব্যয়ে সেচ নালা তৈরী, উন্নতধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন তৈরী, বাউ-জিয়া সার ও বীজ ছিটানো যন্ত্র, সৌর ড্রায়ার, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট উদ্ভাবন, সবজি বীজ শোধন যন্ত্র, ভাইরাস শনাক্তকরণ যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নতধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, পশুখাদ্য কাটার মেশিন, ঝিনুক চূর্ণ করার হস্তচালিত মেশিন, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত মানের দেশি চুলা, কেন্দ্রীয়ভাবে শষ্য শুষ্ককরণ ব্যবস্থার উপযোগী কম্পিউটার সফটওয়ার তৈরী, খাদ্য হিসেবে গম ও ধানের ভূসির বিশেষায়িত ব্যবহার কৌশল, স্বল্প ব্যায়ে ধান কাটার মেশিন, ফলের রস সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি, পন্ড অ্যারেটর ও শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের বিদুৎবিহীন শীতলকরণ চেম্বার প্রযুক্তি, বিএইউ এসটিআর ড্রায়ার-অল্প সময়ে ধান শুকানোর যন্ত্র আবিষ্কার, শিং ও মাগুর মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন , ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেইজ্ড মৎস্য চাষ,ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মাৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্য খাদ্য তৈরী, মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উন্নয়ন ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তির ব্যবহার কৌশল, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ,

মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ওষুধী গাছের ব্যবহার এবং, রুই, কাতলা, মৃগেল, বিপন্ন প্রজাতির মাছ মহাশোল ও বাঘাইর, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, নিরাপদ সুটকি তৈরীর ট্যানেল উদ্ভাবন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, সহজলভ্য উপায়ে মাছের খাদ্য তৈরি ও গুনগত মান নির্ণয় প্রযুক্তি,ফিস বার্গার, ফিস বল, ফিস ফিংগারের মত জনপ্রিয় খাবার উদ্ভাবন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং বাড়ীর ছাদে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারবিহীন একইসাথে মাছ ও সব্জী উলম্ব একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করার কৌশল, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ প্রযুক্তি, ধান ক্ষেতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় মাছের আঙ্গুলি পোনা উৎপাদন,ইফকাস পদ্ধতিতে ভাসমান খাচা ও মাচায় মাছ ও সবজী উৎপাদন, জৈব সার হিসেবে পুকুরের কাদা ব্যবহার করে ঘাস উৎপাদন,গাঙ মাগুরের কৃত্রিম প্রজনন,ক্ষত রোগের প্রতিকার নির্ণয় ইত্যাদি। বাকৃবি জার্মপ্লাাজম সেন্টারটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩২ একর জায়গা গিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎতম ফল সংগ্রহশালা এখন পর্যন্ত। শত শত দেশি-বিদেশি ফলের বাণিজ্যিক জাত উদ্ভাবন কওে এটি দেশের পুষ্টি ও অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে আসছে। প্রায় ২২০ প্রজাতির ১০ হাজার ৫০০ মাতৃগাছসহ ৮০০ জাতের উদ্ভিদের মধ্যে ২১২টি আমের, পেয়ারার ৪৭টি, লিচুর ৩২টি, ৪৮ ধরনের সাইট্রিক ফল, ৬৮ জাতের ঔষধি ফল, কাঁঠাল ৯৮টি এবং বিশ্বের ৪৪ দেশ থেকে অর্ধশতাধিক ফলের সমারোহ দেখা যাবে এখানে। জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ড. এম এ রহিমসহ সহকারী গবেষকদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছে প্রায় ৭৫ জাতের ফল।

এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ডিগ্রিপ্র্রাপ্ত কৃষিবিদগণ আজ ছড়িয়ে আছেন দেশের কৃষি ও গ্রামোন্নয়নে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। পেশাভিত্তিক গবেষণা ও সম্প্রসারণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস), মৎস্য অধিদপ্তর (ডিওএফ), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই), বাংলাদেশ আণবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই), বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিএসআরআই),তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি), বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই), বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট (আরআরআই), বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং এনজিও।

বাংলাদেশের প্রথম উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাকৃবি ক্রমাগত সাফল্যের পথ বেয়ে ৫৮ বছরের গৌরবময় যাত্রাপথ অতিক্রম করে ৫৯ তম বর্ষে পদার্পণ করছে এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে পরম আনন্দ ও গৌরবের। বিশাববিদ্যালয়ের গৌরবময় বিজয়গাথা বাংলাদেশ কে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি গ্রাজুয়েট বাংলাদেশের এবং বিদেশে বিভিন্ন কর্মস্থলে গিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের আদর্শ এবং ভাবগাম্ভীর্য যেভাবে অক্ষুন্নরেখে বাকৃবির সুনাম নিয়ে এসছে তাদের জানাই আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর