দুই বছরে জন্ম নিয়েছে ৯১ হাজার শিশু, নেই জন্মনিয়ন্ত্রণের আগ্রহ

নতুন পুরনো মিলে বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত দুই বছরে জন্ম নেওয়া ৯১ হাজার শিশু। এক একটি পরিবারে সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জনের মতো।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের কোনো আগ্রহই নেই। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।

অনেকে এখানে এসে বিয়ে করেছেন। এসব রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের আগ্রহ কম বলে জানান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক ডাক্তার পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি ১২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোহিঙ্গা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে ১৫-এর মতো।

উখিয়ার মধুর ছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আব্দুল মজিদ জানান, তার দুই স্ত্রীর ঘরে ২২ সন্তান। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর নির্দেশে সন্তান-সন্তানাদি হয়, সেখানে ওষুধ খেয়ে বন্ধ করলে কেমন দেখায়।

একই ক্যাম্পের নতুন বিবাহিত আবুল কাশেম বলেন, আমার স্ত্রী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বাস্থ্য সহকারীরা আমার স্ত্রীকে বড়ি খেতে বলছে। কিন্তু আমি নিষেধ করেছি। কারণ এটা আল্লাহর হুকুম।

টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের নুরুল কাদের বলেন, বাচ্চা না হওয়ার জন্য কোনো ওষুধ খেলে তা হবে আল্লাহর হুকুমে হাত দেওয়ার মতো। আমরা সেই পাপ করতে পারব না।

একই ক্যাম্পের বাসিন্দা রহিমা বিবি বলেন, আমার এখন ১৩টি সন্তান। আর সন্তান না হওয়ার জন্য কয়েক দিন ওষুধ খেয়েছি, কিন্তু আমার স্বামী জানার পর নিষেধ করায় আমি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।

ক্যাম্পগুলোয় স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা আরটিএমের ম্যানেজার নাসরিন আক্তার মনিকা বলেন, রোহিঙ্গা নারীরা এ ব্যাপারে আগের চেয়ে একটু একটু সচেতন হচ্ছে। নিজের শরীরের কষ্ট তারা বুঝতে পারছে।

কিন্তু পুরুষদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণে একেবারেই আগ্রহ নেই। অনেক নারী পদ্ধতি গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসছেন বলেও জানান তিনি।
ইউএনএইচসিআরের জনসংখ্যাবিষয়ক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, গত দুই বছরে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৯১ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে।

এর মধ্যে এক বছরের নিচে রয়েছে ৩১ হাজার শিশু। আর দুবছরের নিচে রয়েছে ৬০ হাজার শিশু। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পগুলোয় নানা কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের এখানে বসবাসের পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থা করা ও সেই সঙ্গে নিজ দেশে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর ও গত ২২ আগস্ট দুটি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন হয়নি। তবে সরকার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার আজ রবিবার দুই বছর পূর্ণ হলেও ক্যাম্পগুলোয় এ নিয়ে এবার কোনো আয়োজন থাকছে না বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।

তিনি বলেন, কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা তাকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করব। গত শনিবার পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ৩৩৯ পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালুসহ এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে নানা কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর