ধামুইরহাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটকারী চিহ্নিত দূবৃর্ত্তদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা

নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলার বস্তাবর কাগজকুটায় আদিবাসী ভূমিহীন পল্লীতে গভীর রাতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটকারী চিহ্নিত দূবৃর্ত্তদের গ্রেফতার ও বিচার, ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণবাসন এবং পুলিশ ফাঁড়ী স্থাপন করে আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে কাগজকুটা স্থানে আদিবাসী বাম গণতান্ত্রিক জোট নওগাঁ জেলা শাখার আয়োজনে এই কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।

বামগণতান্ত্রিক জোট নওগাঁ জেলা শাখার সমন্বয়কারী ও সিপিবি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রেজার সভাপতিত্বে বাসদের নওগাঁ জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, সিপিবি’র নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেবেকা সরেন, বাসদের পত্নীতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রবিউল টুডু, ধামুইরহাট শাখার আহ্বায়ক দেবলাল টুডু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তরা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মিষ্টারের নেতৃত্বে ৪০/৪৫জন ধারালো বড় হাসুয়া, কুড়াল, তীর ধনুক, লাঠিসহ ঘুমন্ত ভূমিহীন আদিবাসি ও মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে হামলা, মারপিট, ভাংচুর ও পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই নৃসংশ নির্যাতন ও হামলার পর থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ মাত্র দুইজন আসামীকে গ্রেফতার করেছে।

মামলা দায়েরের ৫দিন পার হলেও বাঁকি আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশের কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ নেই।

বক্তারা আরো বলেন, হামলা-অগ্নি সংযোগের আগে ২১ মার্চ মোশারফ হোসেন মিষ্টার থানায় ওই ভূমিহীন ১৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মাছ লুট করার একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়েরেরপর এই ভূমিহীনদের বিভিন্ন সময় থানা পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।

এতে পুলিশের মধ্যে ভূমিহীন মধ্যে আতঙ্কগ্রস্থ্য করে তুলে যখন ভূমি দখল করতে পারেনি তখন ঘরবাড়ি পুড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমিহীনরা খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন এবং তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। জেলার ত্রাণ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের সরকারিভাবে ঘর নির্মাণ, পর্যপ্ত খাদ্য সামগ্রী, নগদ অর্থ প্রদান, পরিধেয় কাপড় সরবরাহ করা ও বিচারের জোর দাবি জানান।

ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকিরুল ইসলাম জানান, বিবাদমান ওই সম্পত্তিতে মোশারফ হোসেন মিষ্টারের নেতৃত্বে ৪০/৪৫জন ধারালো বড় হাসুয়া, কুড়াল, তীর ধনুক, লাঠিসহ ঘুমন্ত ভূমিহীনদের বাড়ি-ঘরে হামলা, মারপিট, ভাংচুর ও পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করায় থানায় ২৫ তারিখে মামলা দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্থ দুলালী পাহান।

মামলায় ঘটনার মূল হোতা মোশারফ হোসেন মিষ্টারসহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। মামলার বাঁকি আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, ওই সম্পত্তি নিজ নামে লীজ রয়েছে দাবি করে গত ২৪ তারিখে রাত ১টার দিকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে বস্তাবর গ্রামের কাগজকুটা পুকুর পাড়ে ভূমিহীন আদিবাসি ও মুসলিমদের প্রায় ৩৬টি বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাংচুর ও পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘটনায় ৬ আদিবাসি আহত হয়েছেন। এই অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনাটি জানতে পেরে বিজিবি-১৪ পত্নীতলার ব্যাটলিয়নের স্থানীয় বস্তাবর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত ঘটনা স্থলে যান।

বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারিরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করা ভূমিহীনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়ায় এলাকা ছাড়া হয়েছেন আদিবাসি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থরা খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এদিকে সোমবার ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জেলা প্রশাসন থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিদর্শণ করিয়ে ঘটনা অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রিটের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ মোতায়ন করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

ঘটনারপর ২৬ মার্চ বিকেলে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল ও ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।

সিপিবি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রেজা জানান, খাস সম্পত্তি পুকুর কোন ভাবেই কাউকে পত্তন দেয়া যায় না। ওই সম্পত্তি পত্তন নেয়ার বিষয়টি পুরটায় ভূয়া। তাই ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুত ওই ভূমিদস্যু মিষ্টারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, ওই সম্পত্তি দখলে রাখা মিষ্টারের লোকজনদের কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের বলা হয়েছে- তাদের মধ্যে ক’জন ভূমিহীন রয়েছেন তারও তালিকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের বলা হয়েছে- প্রশাসনিক অনুমতি না নিয়ে ওই সম্পত্তিতে কিভাবে সেখানে বসবাস শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই কোন কাগজপত্র দেখাননি।

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত শেষ করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রদান করেছেন। ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর